পোস্টগুলি

প্রতিরোধে বীর ভারত-সন্তান - তমোঘ্ন নস্কর

ছবি
  প্রতিরোধে বীর ভারত - সন্তান   তমোঘ্ন নস্কর     উনবিংশ পর্ব : বারবাঁকি কথা     দুর্দান্ত গরমে মাটির উপর থেকে ভাপ উঠছে। এলোমেলো হাওয়ায় উড়ে আসা বালুকণা তপ্ত দীপশলাকার মতো জ্বালিয়ে দিচ্ছে মুখের চামড়া। শিরস্ত্রাণ , বক্ষবন্ধনী , এসবের বাইরে যতটুকু জায়গা ফাঁকা আছে , সেখানে রুধির জমে আছে থপথপে হয়ে। কিন্তু তিনি সুহেলদেব। এত সহজে হার মানবেন না। দু’হাতে খণ্ডদু’টি আর-একবার ঘুরিয়ে নিয়ে বাহবার পেটে গুঁতো মারলেন। বাহবা তিরবেগে ছুটে চলল সম্মুখ বাহিনীর ফাঁকফোঁকর গলে … বাহবা আর তার পৃষ্ঠে রাজা সুহেল দেবকে ততক্ষণে ঘিরে নিয়েছে চার-পাঁচজনের ব্যক্তিগত দেহরক্ষী দল। তারাও বুঝে গেছে , তাদের রাজার উদ্দেশ্য কী ? চারদিক থেকে পাঠানবাহিনী শেষবারের মতো একত্রিত হয়ে চেষ্টা করল বাধা দেওয়ার। দু’-একটি তির-বল্লম যে ছুটে এল না , তা নয় … বাহবার কোমরের কাছটা ছড়েও গেল। কিন্তু সে শিক্ষিত রণঅশ্ব। সেও বুঝে গেছে , তার প্রভু কী চায় … তার প্রভু যদি সফল হয় , তা হলে বিশ্রাম সেটুকু— এই মূকপশুও সেটা বুঝে নিল। লাগামের তীব্র টানে লাফিয়ে উঠল বাহবা। তারপরেই হাহাকার উঠল প...

প্রতিরোধে বীর ভারত-সন্তান - তমোঘ্ন নস্কর

ছবি
  প্রতিরোধে বীর ভারত - সন্তান   তমোঘ্ন নস্কর       অষ্টাদশ পর্ব : সমুদ্রাধিপতি   পশ্চিমের আকাশ তখনও ঘন নীলিমায় ঢাকা। সূর্য উঠতে তখনও ঢের দেরি। ভারী আকাশটার দিকে এক ঝলক তাকিয়ে মনে হয়, যেন মস্ত বড়ো কালচে-নীল চাদর গায়ে দিয়ে কেউ ঘুমোচ্ছে! জেলেরা নাও ঠেলা শুরু করে। তাদের দিন সূর্য ওঠার আগেই শুরু হয়। চকচকে রোদ যখন ওঠে, ততক্ষণে তাদের নৌকার খোল ভরে ওঠে রুপোলি শস্যে। আচমকাই শিঙার গম্ভীর ভারী ধ্বনিতে থমকে দাঁড়াল তারা! পূর্ব দিক থেকে সার সার কী যেন আসছে! আর সেই সঙ্গে ঘন ঘন শিঙাধ্বনি। তাদের আলোয় লাল হয়ে উঠছে পূর্ব দিকের আকাশ। সূর্যদেব স্বয়ং অভিবাদন জানাচ্ছেন তাদের। সেই সঙ্গে জলের ভীষণ আলোড়ন বলে দিচ্ছে, বল্লভ আসছে।   ***   হ্যাঁ, বল্লভ। রাজা অগ্গুকের সেই কিংবদন্তি রণতরী, যা আরব নৌবাহিনীকে চিরতরে স্তব্ধ করে দিয়েছিল। সেদিন পূর্ব দিগন্তে যে-রক্তিম আভা দেখা দিয়েছিল, তা কেবল নতুন দিনের নয়— এক দীর্ঘমেয়াদি সংঘর্ষের অগ্নি-পূর্বাভাস। ৭৫৬ খ্রিস্টাব্দ। স্থলপথ দিয়ে বারবার ভারতবর্ষের উপরে নেমে এসেছে খলিফার সেনাবাহিনী। কখনও ব্যর্থ হয...

বীজ - দেবজ্যোতি ভট্টাচার্য

ছবি
  বীজ   দেবজ্যোতি ভট্টাচার্য       “ অরুন্ধতী ? ও লা অরুন্ধতী ? নাইতে যাবি তো ?” বড়দির গলা। অরুন্ধতীর এই বড়োননদটি বেশ গ্রামভারী চেহারার মানুষ। সম্প্রতি ছেলে হয়ে আরো মোটাসোটা গোলগাল হয়েছে। চৌধুরীপাড়ায় শ্বশুরবাড়ি। “ কী রে কানে খোল জমেছে ? শুনতে পাস না ?” বড়দির গলাটা এইবার ঘরের ভেতর ঢুকে এসেছে। একচিলতে বারান্দা ঘরের বাইরে। তার ওপর উঠে এসে দরজা দিয়ে ঘরের ভেতর উঁকি মারছে। উনুনের তলায় পেতলের পাইপটা দিয়ে ফুঁ দিতে দিতে অরুন্ধতীর চোখে ধোঁয়ার জলের সঙ্গে অন্য একটু জলও চলে এল। ছেলে হয়ে বড়দির শ্বশুরবাড়িতে প্রতাপ বেড়েছে। কাজের লোক রাখা হয়েছে একটা। তাকে এসব কাজকর্ম এখন খুব একটা করতে-টরতে হয় না। “ দেখ না বড়দি , হতচ্ছাড়া উনুন...” গলা ধরে এল অরুন্ধতীর। দেশের বাড়িতে কাঠের উনুনে দুটো কাঠিকুটো ফেললেই গণগণে আগুণ ওঠে। আর এদেশের এই হতচ্ছাড়া কয়লা... অতসী এসে উঁকি মেরে উনুনটার দিকে একনজর চেয়েই ফিক করে হেসে ফেলল , “ উফ। মরি মরি। উনুন ভর্তি কয়লা চাপিয়ে তলায় কাগজের নুড়ো জ্বেলেছেন। এভাবে সারাদিনে তোর উনুন ধরবে ? দাদাটা যে কোথেকে এই গেঁয়ো ভূতটাকে...” “ গেঁয়ো ভূত ? আমাদের জলপাইগুড়ি...