অপু: বাংলা মাটির এক তারা - প্রীতম দে
বাংলাদেশের নায়িকা বলতেই আমরা কলকাতার লোকজন ভাবি জয়া
এহসান। নায়িকা হিসেবে অপু বিশ্বাসের নাম সেই দেশে যে কত লোকপ্রিয় তার সম্বন্ধে
আমরা কণামাত্র ধারণা রাখি না। পরিমনী নিয়েও এদেশি পুরুষের নেট-মহলে ও নিদ-মহলে
আলোড়ন উঠেছে বটে,
তবে তা ক্ষণস্থায়ী বুদবুদ-মাত্র।
এত কম বয়সেই
নায়িকা অপু বিশ্বাসের সিনেমার সংখ্যা ১০০ ছাড়িয়েছে। ফেসবুকে ৮ মিলিয়ন ফলোয়ার।
অন্যান্য নায়িকা তো বটেই,
শাকিব খানের থেকেও মিলিয়ন-দুই বেশি।
কলকাতার
রেস্তোরাঁয় সেই দিনটি কোনওদিন ভুলতে পারব না। আকাশের একটি তারা সেদিন আমাদের
সঙ্গে লাঞ্চ করেছিল। সেদিন অনেক গোপন কথা শেয়ার করেছিল সে। দুই পরিবারের গেট
টুগেদার। আমার মেয়ে আর অপুর পুত্র জয়, দুই ভাইবোন
খেলা করছে। আর অন্যদিকে অপু একের পর এক ইলিশ রান্নার রেসিপি বলছে আমার
সহধর্মিনীকে। সে একসময় হাত পুড়িয়ে রান্নাও করেছে। সেদিনই জানতে পারি তার
ব্যক্তিগত জীবনটা সিনেমার থেকে কোনও অংশে কম নয়। একান্ত গোপন সেসব কথা দেওয়ালের
কাছেও বলতে পারব না। তবে এটুকু বুঝি মা হওয়াটা তার কাছে অন্যদের মতো জাস্ট
স্টেটাস নয়,
একটা একপেশে লড়াই। এবং জীবনসংশয়ও হয়েছিল। আমার আর আমার
স্ত্রীর চোখে জল এসেছিল সেদিন পুরো ঘটনা শুনে। এরকমও নায়িকা হয়। রুপোলি পর্দার
সোনালি ভালোবাসা বাস্তব জীবনেও অ্যাপ্লাই করতে যায়। সেদিন প্রবল ঝড়বৃষ্টি
হয়েছিল। উথালপাতাল জীবন-বিতর্ক, তার মধ্যে সবসময়ের
সাথি জননী করোনায় মারা গেলেন। আমি তাকে বলি, “এত আঘাত সামলে
উঠে আবার নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে, নিজের প্রযোজনায় হাত
দেওয়া! অপু,
সালাম নমস্কার এই মনের জোরকে।”
অপু মুখ নিচু
করে লাজুক হেসে বলে,
“কী যে বলো দাদা!”
সরকারি
সহায়তায় অপু নিজের প্রযোজনায় ছবি করছে ‘লাল শাড়ি’। প্রযোজনা সংস্থার নাম মা আর ছেলের নামে— অপুজয় প্রোডাকশন্স। এরমধ্যেই, কেউ জানে না, নিঃশব্দে
গয়ায় সে প্রয়াত মা-বাবা পিণ্ড দান করে গেছে একা একা।
আমি জিজ্ঞেস
করেছি,
অন্য অনেক নায়িকাদের মতো ফুক-ফুক করে সিগারেট খাওয়া বা
বাজে-বাজে কথা বলে বাজার মাত করার প্রবণতা তার আছে কি না। তার লজ্জা দেখে আমিই
লজ্জায় পড়ে গেছি। না,
সে ওইসব সস্তা স্বভাবের অনেক ঊর্দ্ধে। এত স্টারডম। অথচ এত
ডাউন টু আর্থ। এত কাছের। আত্মীয়ের মতো।
কেউ দায়ে পড়ে
আর কেউ গায়ে পড়ে সিঙ্গল মাদার হয়। বিশেষ করে এই গ্ল্যামার দুনিয়ায়। অপু এ দু’টির কোনটাই নয়। সে সবচেয়ে ঝকমকে স্টার যার অন্তরে
অভাবনীয় এক কাছের মানুষ। একজন বান্ধবী। একজন বোন। একজন দিদি। সর্বোপরি একজন মা।
শাকিব খান
ইনশাআল্লাহ আপনি খুশনসিব। কারণ আপনাকে মই করে অনেকে ওপরে উঠে। কিন্তু অপু আপনাকে
সত্যি ভালোবেসেছিল। সে আপনার মরুভূমির জীবনে একমাত্র মরূদ্যান। সাহারা। আপনি কী কী
করেছেন আপনি জানেন আর জানি আমরা কয়েকজন। সে বলেওনি। বলেও না। তার চোখের জল কথা
বলে। ভুল বললাম। ঘ্যান-ঘ্যান করে দুঃখ বিলাসী হয়ে থাকার পাবলিক সে নয়। অপুর
বায়োপিকে সব সত্য সামনে আসবে।
নিক্কো পার্কে
গেছি আমরা দুই ফ্যামিলি। টয় ট্রেনে চড়েছি। বাচ্চারা খুশি। বাংলাদেশি এক
একান্নবর্তী মুসলিম পরিবার। দেখে বোঝা যায় সম্ভ্রান্ত পরিবারের। হঠাৎ দেখি আমরা
ঘেরাওয়ের পর্যায়ে চলে গেছি। আপুর সঙ্গে ছবি তোলার আব্দার। স্বপ্নের স্টারকে
নাগালে পেলে যা হয় আর-কি। এবং তার মধ্যে অধিকাংশই মহিলা ফ্যান। যে-মেয়ে দেখে
সে-ই বলে,
“আপু তুমি এভাবেই থাকো। এভাবেই এগিয়ে যাও। আমরা তোমার সঙ্গে
আছি আপু।”
অপুর জীবন সংগ্রাম তাকে নেহাত সিনেমার হিরোইনের থেকে অন্য
একটা জায়গায় অনেক উঁচুতে পৌঁছে দিয়েছে। এই জায়গাটাই আসল হিরোইনের।
অপু কিছু
প্রিন্সিপল মেনে চলেন।
কোনও ছোটো পোশাক পরা বা ঘনিষ্ট দৃশ্যে অভিনয় করার ব্যাপারে
তাঁর আপত্তি আছে।
অপুর
জীবন-সংগ্রাম থেকে আমরা সকলেই যদি কিছু শিক্ষা গ্রহণ করার চেষ্টা করি তাহলে সমাজের
মঙ্গল। সমাজের আসল হিরো-হিরোইন তাঁরাই যাঁরা অনুসরণ করার মতো কিছু উদাহরণ তৈরী
করেন।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন