প্রতিরোধে বীর ভারত-সন্তান - তমোঘ্ন নস্কর
প্রতিরোধে বীর ভারত-সন্তান
তমোঘ্ন নস্কর
পর্ব ৬: মশালা রানি
নোনা হাওয়ায়
শ্বাস টানলেন তিনি। এই তো, এই বাতাস তাঁর মাতৃভূমির বাতাস। তিনি
মনে মনে ঠিক জানতেন, এই বাতাস কখনও তাঁর সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করবে না। ঠিক তা-ই
হল। বাতাস পড়ে গিয়ে সম্পূর্ণ অন্য দিক থেকে বওয়া শুরু করল।
ছোটো ছোটো ছিপ নৌকা থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে
তির এসে পড়তে লাগল। এতক্ষণ বাতাসের বিপরীত গতির জন্য তিরগুলি এসে পৌঁছোতে পারছিল
না৷ মুহুর্মুহু বিস্ফোরণে
কেঁপে উঠল পোর্তুগিজদের ভারী জাহাজগুলো।
অঁও-অঁও, বাতাস কাঁপিয়ে
ভেসে আসে শব্দ মারাক্কারের, সমুদ্রহস্তী মারাক্কার আসছে। কুনিয়ালি
মারাক্কার ভারতবর্ষের নৌযুদ্ধের অন্যতম স্থপতি, আরব সাগরে
ত্রাসস্বরূপ...
তার মানে, স্বয়ং জামোরিন
তাঁর ডাকে সাড়া দিয়েছেন। আর তাঁকে পায় কে? দ্বিগুণ উৎসাহে
ঝাঁপিয়ে পড়লেন রানি। সূর্য চুম্বন করল তাঁর তরবারির ডগা। ঝনঝনানি উঠল অসির...
***
বৃষস্কন্ধ অজর মানুষটি নিজের কুঠারটি ছুড়ে দিলেন সমুদ্রের দিকে। সমুদ্রের
মধ্যে ওই পর্বতে পৌঁছোতে হলে পথ গড়তে হবে যে...
ছুড়ে দিলেন আপনার পরশু অর্থাৎ কুঠার। সমুদ্র ভয়ে পিছিয়ে গেল বেশ কয়েক হাত।
এক বিস্তীর্ণ ভূ-ভাগ জেগে উঠল, সমুদ্রের বুকের ভিতর থেকে। সেই ভূভাগ
আদতে সপ্তকোঙ্কণ।
“কেরলাচ্চ তুলুবাশ্চ তথা
গোরাষ্ট্রবাসিনঃ।
কৌস্কশাঃ করহাটাশ্চ বরলাটশ্চ বৰ্ব্বরা॥”
অর্থ: কেরল, তুলুব, গোরাষ্ট্র, কোঙ্গণ, করহাট, বরলাট ও বর্বর
এই সাতটি নিয়ে পরশুরাম ক্ষেত্র বা সপ্তকোঙ্কণ।
এই যুদ্ধকে অন্যভাবে, এক ক্ষত্রিয় দ্বারা সমুদ্রের আগ্রাসন
হতে সপ্তকোঙ্কণের উদ্ধার বলা যায়। এক অসীম ক্ষমতাসম্পন্ন পুরুষ সম্ভবত বাঁধ
প্রক্রিয়া বা পাড় বাঁধন প্রক্রিয়া (যা সে-সময় এ অঞ্চলের অধিবাসীদের অজ্ঞাত ছিল)
দ্বারা এই অঞ্চলকে সুদৃঢ় করেন।
আমাদের আজকের আলোচনা সপ্তকোঙ্কণের তুলুদেশ বা তুলুনাদের ছোট্ট একটি রাজ্য উলাল
আর সেখানকার রানিকে নিয়ে।
***
অন্যমনস্ক হতেই
তরবারিটা ছুঁয়ে গেল কপাল। ভাগ্যিস কাঠের ছিল, না হলে এতক্ষণ
গভীর দাগ ফেলে দিত। ভীষণ মুষ্ঠাঘাত করলেন গুরু। চড়া গলায় ওপারে ক্রীড়ারত
বালিকাদের ধমক দিলেন। তিনি বুঝতে পারছিলেন, তাঁর এই খুদে
শিক্ষার্থীটির মনোযোগ ওইখানে গিয়ে পড়েছে।
মাতৃধারার বংশগতি বহন করে চলে তুলুনার রাজঘরানাগুলো। অলিয়সান্তানা অর্থাৎ
কাকার পর ছোটোভাই-এর সন্তানাদি রাজা হওয়ার সুযোগ পাওয়ার আগে, সুযোগ আসবে
পিসির সন্তানদের। এবং এই ধারা চলে আসছে সুপ্রাচীন কাল হতে। সেইমতো মামা রামরাই
তাঁর একমাত্র ভাগ্নি আব্বাক্কাকে অস্ত্রশিক্ষা ও রাজনীতি শিক্ষা দেওয়া শুরু
করেছিলেন। কিন্তু অতটুকু বাচ্চা, তার কি এসবে মন লাগে? বারে বারে
মনঃসংযোগ বিচ্ছিন্ন হত। মন করত, খেলার পুতুল নিয়ে পড়ে থাকতে, ভাগ্যিস পড়ে
থাকেননি। তা হলে মধ্যযুগে এমন এক বীরাঙ্গনা চাপা পড়ে রইতেন সংসারের পরদার
ঘেরাটোপে।
***
সমস্ত লোকলশকর
নিয়ে রানি বেরিয়ে চললেন বাঙ্গা (বর্তমান ম্যাঙ্গালোর) রাজপ্রাসাদ থেকে, এত বড়ো অপমান
মেনে নিতে পারলেন না বাঙ্গা আরাসা লক্ষ্মাপ্পা। এক নারীর এতখানি অহংকার! বেশ, তিনি এর শেষ
দেখে ছাড়বেন...
রানি আব্বাক্কা নিজের সিদ্ধান্তে অটল। হতে পারেন তিনি ক্ষুদ্র রাজ্য উলালের
রানি৷ কিন্তু রাজত্ব
স্বতন্ত্র এবং আর্থিক ও সামরিকভাবে স্বাবলম্বী। স্বামীর অধিকারে স্ত্রীর সম্পত্তি ভোগ
করা যায় কিন্তু মানুষের উপর কর্তৃত্ব করা যায় না। উলালের মানুষজন লক্ষ্মাপ্পার সেবাদাস
নয়। ক্রমাগত করের বোঝা, উলালকে গ্রাস করার চেষ্টা তাঁকে ক্রমশ
ব্যথিত-ক্ষুব্ধ-ক্রুদ্ধ করে তুলেছিল। বিবাহের বাঁধন ছেড়ে বেরিয়ে এলেন তিনি৷
মাতৃভূমির চেয়ে বড়ো কিছু নয়৷ একজন রাজা বা রানি তার সন্তানকে কষ্টে রাখতে পারে না।
***
ম্যাঙ্গালোরের
ভাঙা-গড়ের সম্মুখে চিত্রার্পিতের ন্যায় স্থির হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন তিনি। বারিয়া
জাহাজগুলি জ্বলছে। রাশীকৃত ভাঙা কাঠের পিপে, ভিতরে
দু’-চারটে চাল কিংবা গোলমরিচের দানা পড়ে আছে। যেন হাহাকার করে বলতে চাইছে, আমাদের সব শেষ।
প্রায় দেড়শত কুইন্টাল চাল গোলমরিচ ও এলাচ লুট হয়েছে।
মালালির গ্রামগুলিতে বাঁধ দেওয়ার আশু প্রয়োজন ছিল। শ্বশুরবাড়ি থেকে ফিরে
রাজদায়িত্ব নেওয়ার আগে নিজের সকল কারিগর নিয়ে সেখানেই পৌঁছেছিলেন। আর সেটাই কাল
হল।
এরই সুযোগ নিল বিদেশি পোর্তুগিজ
দস্যুরা। অবশ্য এদের রীতিই এমন। বিশ্বাসঘাতক জলদস্যু তিমোজিকে হাত করে গোয়াকে
ধ্বংস করেছে। আলবুকার্কের সাক্ষাৎ ডানহাত ছিল এই বিশ্বাসহন্তা দেশি সর্দার। গোটা
কোঙ্কণ তার নখদর্পনে, সে-ই একের পর এক সন্ধান দিয়ে চলেছে।
এখন লক্ষ্য উলালের রানি। ভাবছে, এই মেয়েমানুষ আবার কী করবে?
চোয়াল শক্ত হয়ে গেল তরুণী আব্বাক্কার। এত সোজা নয়...
বার্তা পাঠালেন দিকে দিকে। কালিকটের জামোরিন, বিজাপুরের
সুলতান, বিদনুরের
কিংবদন্তিসম নায়কা সর্দাররা সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিল।
দিক দিক থেকে এল কারিগর। গোটা মালাবার
জুড়ে বন্দর ও সমুদ্রে ধার ধরে গড় তৈরি শুরু করলেন রানি।
ভারতবর্ষের ইতিহাসে এই সময়টা ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। ১৫২৫ সালে সিংহাসনে বসে এই
সকল কাজ শুরু করলেন রানি আব্বাক্কা চৌথা। অন্যদিকে ১৫২৬-এ পানিপথের ভীষণ সংগ্রামের
পর ভারতবর্ষে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করছে মুঘল সাম্রাজ্য। উত্তর ও মধ্য ভারতের ভীষণ
অবস্থার মধ্যে দক্ষিণের কথা অনেকেই ভুলেছেন আর তাই দুর্দান্ত পোর্তুগিজরা বারে
বারে হানা দিয়ে চলেছে এই দিকে।
তারা সমুদ্রজীব। সমুদ্র বয়ে এসে আচম্বিতে হানা দিয়ে লুট করে নিয়ে যায়।
লক্ষ্য, এই অঞ্চলগুলির
মশলার বাজারটি দখল করা। ইউরোপের বাজারে এই মশলার মূল্য সেই সময় স্বর্ণ অপেক্ষা
কয়েক গুণ অধিক ছিল। আর তার সঙ্গে ছিল দাস-ক্রীতদাস ব্যাবসা।
***
হতভম্ভ হয়ে
দাঁড়িয়েছিল সাহেব সৈন্যরা। ছোট্ট ছোট্ট বাঁকানো ছুরিগুলো উঠছে, নামছে। তারা সব
বুঝছে যে, তাদের পালাতে
হবে কিন্তু পালাবে কোথায়! তাদের জাহাজগুলির তলে অজস্র পদ্ম মৃণাল, নীচে পড়লেই
কেটে ফেলবে ওরা! একটু আগেই ক’জন সঙ্গী ঝাঁপ দিয়েছিল, তাদের মৃতদেহ
এখনও ভাসছে জলে...
১৫২৫ সালের প্রথম ব্যাঙ্গালোর আক্রমণের প্রত্যাগত হচ্ছিল, ভয়ংকর রানি
এসে উপস্থিত হয়েছিলেন। মুগাভীর অর্থাৎ পূজা-দের কাছে দীর্ঘদিন ধরে তারা মৎস্য
জীবিকার সঙ্গে বিপদের দিনে দেশের জন্য শস্ত্র ধরে আসছে।
এর কয়েকদিন পর কয়েকটি নৌকা অপহরণ করে পোর্তুগিজরা। তারা খুশিতে ডগমগ। এই কালো
কালো বিশাল মানুষগুলো ইউরোপে ক্রীতদাস হিসাবে ভালো মূল্য পাবে। তাদের অসহায়ের
মুখগুলো দেখে আর বাঁচার আকুতি দেখে নেশা যেন আরও চড়ে যায়। পোর্তুগিজ সাহেবরা
হাসিতে গড়িয়ে পড়ে। আজ এই অশিক্ষিত বুনো মানুষগুলো তাদের হাসির খোরাক, চাবুক ওঠে
আকাশে ওরা কাঁদে, তারা হাসে...
কয়েক ঘণ্টা পর সেই হাসি বদলে গেল কান্নায়। সেই বুনো জেলেগুলো ভীমের ন্যায়
ভীষণ বিক্রমে চূর্ণ-বিচূর্ণ করল তাদের দম্ভ। অসহায় পোর্তুগিজরা যখন সাড়ে ফিরল
তখন বুঝতে পারল, এ সকলই তাদের
তৈরি করা ফাঁদ। যেচে ধরা দেওয়া, তারপর চতুর্দিক থেকে তাদেরকে ঘিরে ফেলা
এবং বদ্ধ করে হত্যা।
রানি আব্বাক্কা চৌথা এমনভাবে মুচড়ে ভেঙে দিলেন পোর্তুগিজদের শিরদাঁড়া যে, আগামী ত্রিশ
বছর তারা আর আক্রমণ করার সাহসই পেল না।
***
১৫৫৫
গোয়ায়
পোর্তুগিজদের স্থায়ী ঘাঁটি পত্তন হয়েছে। মুঘলদের দরবারে অল্পবিস্তর যাওয়া-আসাও
শুরু হয়েছে। নতুন নিযুক্ত অ্যাডমিরাল ডম আলভারো ডা সিলভেরা-র মনে
হল, এই ক্ষুদ্র
রানিকে ভয় পাওয়ার কোনও কারণ নেই।
প্রথমে কর চাইল সিলভেরা।
স্বাভাবিকভাবে অসম্মত হলেন রানি।
সিলভেরা আক্রমণ করল রানির বন্দরগুলি। ম্যাঙ্গালোর ও উলালের যুদ্ধে নিজের প্রাণ
দিয়ে সেই আক্রমণের প্রায়শ্চিত্ত করল সিলভেরা।
***
১৫৬৮
জেনারেল জন
পিক্সটো-র মাথাটা নিজের বর্শায় গেঁথে নিয়ে বন্দরের মাথায় রেখে আসার নির্দেশ দিলেন
রানি তাঁর সৈন্যদের। যেতে-আসতে সকল জাহাজ দেখুক, উলালের উপর হাত
দেওয়ার শাস্তি কী?
ক্রোধে ফুঁসছিলেন রানি, সম্মুখের সত্তরজনকে একসঙ্গে শিরশ্ছেদ
করতে ইচ্ছা করছে। কিন্তু তবুও নিজেকে সামলালেন। পোর্তুগিজ মানেই বিশ্বাসঘাতক এবং
লোভী।
উৎসবের দিন নিঃশব্দে প্রবেশ করেছিল তারা শহরের মধ্যে। উৎকোচ ও উপঢৌকন দিয়ে
হাত করেছিল বিশ্বাসঘাতকদের। আর তারপর আঘাত হেনেছিল। ভাগ্যিস শেষ মুহূর্তে পালিয়ে
যেতে পেরেছিলেন রানি। না হলে আজ উলাল দখল হয়ে যেত! উলালের পুরনারী আর শিশুরা
তাদেরকে তো ছিঁড়ে-খুঁড়ে খেতে ওরা! পুরুষরা নয় শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত লড়াই করে
যেত। কিন্তু ওই দুধের শিশুগুলো— তাদের ক্রীতদাস করে নিয়ে যেত ওরা। ভাবলেই শিউরে
ওঠেন তিনি। ক্রোধ আরও বাড়ে। আক্রমণ করলেন ম্যাঙ্গালোরের দুর্গে, পোর্তুগিজ
কেল্লাদার মাসক্যারেনহাস পরাজিত হলেন রানির হস্তে। তাকেও হত্যা করে কেল্লার উপর
ঝুলিয়ে দিলেন তার মস্তক, বার্তা সুস্পষ্ট— রানির দেশের মানুষদের
ক্রীতদাস করতে চাইলে পরিণতি হবে এমনটাই।
১৫৬৮
সেই রাত ছিল উৎসবের রাত। সকল নগরবাসী যখন উৎসবে মগ্ন, তখন পিক্সটো-র
নেতৃত্বে চোরের মতো নিঃশব্দে প্রবেশ করেছিল পোর্তুগিজরা। অসাবধানতার সুযোগ নিয়ে
একেবারে উলালের কাছারিবাড়ি অবধি পৌঁছে গিয়েছিল। তাদের লক্ষ্য ছিল, রানিকে পরাজিত
ও বন্দি করা। পুরনারী ও শিশুদের লুট করা। মশলার থেকেও দামি মানুষ...
শেষ মুহূর্তে রানি কোনওমতে পালিয়ে যান। রাত্রির প্রথম প্রহরে আশ্রয় নেন এক
মসজিদে। বিয়ারী ও মুগাভীর যোদ্ধারা তাঁকে আশ্রয় দেন। তারাই জোগাড় করে আনে দুইশত
দৃঢ়প্রতিজ্ঞ অস্ত্রধারী। হিন্দু জৈন মুসলমান এক হয়ে গিয়েছিল সেই
দৃঢ়প্রতিজ্ঞায়। তারপর সেই দুইশত বাহিনী দু’হাজার হয়ে আঘাত হেনেছিল পোর্তুগিজদের
উপর। সেই রাতেই তৃতীয় প্রহরে পরাজিত হয়েছিল পিক্সটো। তাতেও রানির ক্রোধ থামেনি, ভোরের আলো
ফোটার আগে ম্যাঙ্গালোর কেল্লা থেকে পোর্তুগিজদের হটিয়ে সম্পূর্ণ উলালকে
পোর্তুগিজমুক্ত করেছিলেন।
জন পিক্সটো ও অ্যাডমিরাল মাসক্যারেনহাস দুই সমরনায়কের মৃত্যু পোতুর্গিজদের
দমিয়ে দিয়েছিল।
***
১৫৭০, শেষ সংঘাত
রানি বুঝেছিলেন, যতদিন
ম্যাঙ্গালোরে পোর্তুগিজদের কেল্লা থাকবে ততদিন তাঁর রাজত্ব সুরক্ষিত নয়। ঘাড়ের
কাছে নিশ্বাস ফেলছিল ওরা। তাই সংঘটিত হয়েছিল সেই ভীষণ সংগ্রাম। একদিকে পোর্তুগিজ
ও তাঁর স্বামী বঙ্গারাজ লক্ষ্মাপ্পা, যিনি আপন স্ত্রীর প্রতি ক্রোধে স্বজাতির
প্রতি প্রতিশোধ নেওয়ার কথা চিন্তা করে চলেছিলেন! আর অন্যদিকে জামোরিন, বিজাপুরের
সুলতান ও রানির সম্মিলিত বাহিনী। জামোরিনের সেনাপতি স্বয়ং কুনিয়ালি মারাক্কার
সেই যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। মারাক্কারের ভীষণ আক্রমণে ম্যাঙ্গালোর দুর্গ ধ্বংস হয়।
আজও ভারতবর্ষের নৌ-যুদ্ধে মারাক্কারকে আদর্শ মানা হয়। কিন্তু ওই...
বয়স বাড়ছিল কিন্তু রানির উদ্যমে এতটুকু ঘাটতি ছিল না। যাঁর শত্রু ঘরে, তিনি বীর হলেও
অপরাজেয় নন৷
নিজের স্বামীই ধরিয়ে দিলেন তাঁকে।
তবে এত সহজে মুষড়ে পড়ার পাত্রী তিনি ছিলেন না। তিনি ধরা পড়লেও তাঁর উলাল মুক্ত
ছিল। পোতুর্গিজদের কারাগারের মধ্যে থেকেই গোপন সংকেতের মাধ্যমে ক্রমাগত বিদ্রোহ ও
রাজ্য চালনা করে গিয়েছিলেন৷ কথিত আছে, অবস্থা বেগতিক
দেখে এই সিংহীকে চিরতরে শান্ত করা হয়। না, মৃত্যুদণ্ড
দেওয়ার দুঃসাহস ওই ভিনদেশিদের ছিল না। কথিত আছে, ধীরে ধীরে
আফিং-এর বিষক্রিয়ার মাধ্যমে তাঁকে হত্যা করা হয়।
তবে রানিকে মনে রেখেছে ভারতবর্ষ, আঞ্চলিক লোকগাথা। আজও চারণকবিরা গান
গেয়েই চলেন তাঁর নামে ছন্দ বেঁধে। মনে আছে, কান্তারার সেই
‘ভূতা কোলা’; তুলুনাদের
অন্যতম ঐতিহ্য। ওই ভূতা কোলার পূর্বেও গাওয়া হয় রানির গান। তার নামে আছে
ডাকটিকিট, সাহসিকতার
পুরস্কার এবং ভারতীয় নৌ-বাহিনীর পাঁচটি পেট্রোলিং জাহাজ, মহারানি
আব্বাক্কা সিরিজ...
কিন্তু তবুও আমাদের পাঠ্যক্রম ভীষণভাবে নীরব এই সকল বীর-দের নিয়ে, তাই আমাদের এই
প্রয়াস।
______________________________________________________________________________
প্রতিরোধে বীর ভারত-সন্তান ধারাবাহিকটির আগের পর্বগুলি পড়ুন:
প্রথম পর্ব: https://blogs.antareep.in/2025/06/blog-post.html
দ্বিতীয় পর্ব: https://blogs.antareep.in/2025/06/blog-post_13.html
তৃতীয় পর্ব: https://blogs.antareep.in/2025/06/blog-post_20.html
চতুর্থ পর্ব: https://blogs.antareep.in/2025/06/blog-post_24.html
পঞ্চম পর্ব: https://blogs.antareep.in/2025/06/blog-post_24.html
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন