প্রতিরোধে বীর ভারত-সন্তান - তমোঘ্ন নস্কর

 

প্রতিরোধে বীর ভারত-সন্তান

 

তমোঘ্ন নস্কর

 

 

পর্ব ৯: জয়ের পরাজয়

 

 

সন্ধ্যার আকাশটা লাল হয়ে আছে। যেন আসন্ন সন্ধ্যার আশঙ্কায় গোটা দিন মুখ ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদেছে

শেষ বারের মতো প্রাসাদশীর্ষে দাঁড়িয়ে নিজের রাজধানীকে দেখে নিলেন জয়পাল। ধীর, মৃদু পদক্ষেপে অন্দর থেকে কাছারি যাওয়ার অলিন্দে হেঁটে চললেন।

লাহোরের উপকণ্ঠে এই সুবিশাল প্রাসাদ অন্য দিন মুখর থাকত ব্যস্ততা আর মশালের আলোয়। আজ সব আঁধার। কোনায় কোনায় চিকের আড়ালে ঘাপটি মেরে আছে নীরবতা। চলতে চলতে ভ্রম হয় জয়পালের। ঘাড়ের কাছে কে যেন দীর্ঘশ্বাস ফেলল! তারপর মনে পড়ল, গত রাতের দুঃস্বপ্নের কথা। তাঁর পূর্বপুরুষেরা কাঁদছেন, হয়তো তাঁদেরই দীর্ঘশ্বাস বয়ে এসেছে এত দূর! দ্রুত পা চালালেন তিনি ভেবেছিলেন, খোলা আঙিনায় এসে একটুখানি শ্বাস নিতে পারবেন; কিন্তু কই, সেখানেও কেবল বিষণ্ণ বাতাস আর পরাজয়ের ভার।

 

***

 

শেষ বার সিংহাসনে বসতে গেলেন জয়পাল। তারপর কী মনে করে সিংহাসনে বসলেন না। সিংহাসন তাঁকে প্রত্যাখ্যান করেছে। সিংহাসনের সামনে মাটিতেই বসে পড়লেন তিনি। নগ্নপদ, নিস্তব্ধ, ধ্যানমগ্ন। দু’চোখ বেয়ে কুশি নদীর ধারা

যুদ্ধের গন্ধ এখনও যেন তাঁর গায়ে লেগে আছে— অগ্নিময় প্রান্তর, ছত্রভঙ্গ, পলায়নপর সৈন্যদল, একের পর এক ভূমিশয্যা নেওয়া তাঁর প্রিয় হস্তীদল আর সবার পিছনে সুবুক্তিগিনের জয়গর্বিত পতাকা।

 

***

 

হাতের উপর গরম অশ্রুর ফোঁটা পড়তেই চোখ খোলেন জয়পাল। পুত্র আনন্দপাল কাছে এসে দাঁড়িয়েছে। তার কুণ্ঠিত মুখ দেখে যা বোঝার বুঝে গেলেন। ম্লান হাসলেন জয়পাল। হুড়মুড়িয়ে আবেগঘন স্বরে কথা বলে উঠল উতলা আনন্দপাল, “পিতা, আপনি বিশ্রাম নিন। আমিই আজ থেকে রাজ্য পরিচালনা করব। কিন্তু আপনার দু’টি পায়ে পড়ি, আমাকে অনাথ করে রেখে চলে যাবেন না।”

জয়পাল পুত্রের মাথায় হাত রাখেন। তাঁর কণ্ঠে গম্ভীর স্নেহ, “তুমি লড়বে। কিন্তু আমি আর পারব না, আনন্দ। আমার ডাকে সাড়া দিয়ে প্রতিবেশী রাজা যারা এসেছিল , তারা আজ মাটিতে। আমি শুধু জীবিত এক পরাজয়-চিহ্নস্বরূপ। তাদের মৃতদেহগুলি স্বপ্নে আমাকে তাড়া করে বেড়ায়। তাদের স্ত্রী-পুত্র আমাকে অভিসম্পাত দেয়। আমি চাইনা, ওই শাপ তুমি বহন করে চলো। তাই আমি বিদায় নিচ্ছি পুত্র। এক নতুন ভোর এনো তুমি।”

হাউ হাউ করে কেঁদে উঠল আনন্দপাল। শেষ বারের মতো দপ করে জ্বলে উঠলেন রাজা জয়পাল। ভর্ৎসনার দৃষ্টিতে আপনার সন্তানের দিকে তাকিয়ে বললেন, “ছিঃ, রাজার কান্না সাজে না। প্রজার অশ্রু মোছার জন্য রাজা। কিন্তু রাজার অশ্রু মোছার জন্য কেউ নেই। এটা সব সময় মনে রাখবে। তোমাকে দেওয়া এই আমার সেই শিক্ষা।”

প্রাসাদের আঙিনায় মন্ত্র পাঠের ধ্বনি ওঠে। একশত রাজপুরোহিত একত্রে পাঠ করছেন অন্তিমযাত্রার মন্ত্র। অগ্নি-আহ্বান মন্ত্র।

প্রধান পুরোহিত আসেন, “চিতা প্রস্তুত আর্য।” জয়পাল নহবতের দিকে ফেরেন।

 জয়পাল চান— এই মৃত্যুটা যেন রাজচরিত্রের শেষ অনুষঙ্গ হয়ে থাকে। একপাশে বীণাবাদক বসে, বিষাদের রাগ বাজছে।

জয়পাল স্নান সেরে মন্থর পদে এগিয়ে চলেন চিতার দিকে। রাজপুরোহিত শেষ প্রশ্ন করেন, “মহারাজ, আপনি নিশ্চিত?”

দৃঢ় প্রত্যয়ে জয়পাল উত্তর করেন, “এ আত্মহনন নয়, এ রাজধর্ম। ক্ষত্রিয়ের গৌরব মৃত্যুতে, লাঞ্ছনায় নয়।”

মেঘ সরিয়ে এক ফালি চাঁদ ওঠে, মাঠামাঠা আলো ছড়িয়ে পড়ে হিন্দুকুশ পর্বতের উপরে। চিতায় বসেন জয়পাল

 

***

 

ওয়াইহিন্দ, পেশওয়ার, ১০০২ খ্রিস্টাব্দ

 

ধুলোর ঝড় উঠেছে খাইবারের প্রান্তে। সূর্য এখন অর্ধপ্রহরের ঘুমে, আকাশের রং ধোঁয়াটে লাল অথচ এখনই বাজছে রণদুন্দুভি! বিশ্বাসঘাতক!

সুবুক্তিগিনের আমলে গড়া বিশেষ অশ্বারোহী বাহিনী, সাক্ষাৎ যমদূত। ভারী ধর্ম ও পাকা আর শামসীর নিয়েও অসম্ভব দ্রুতগামী এই সম্মুখ-আক্রমণকারীর দল— এরা সুবুক্তিগিনের নির্বাচিত ধর্মযোদ্ধা বা জিহাদবাহিনী। এদের পিছনে লুকিয়ে থাকে, বাকি বিপুল দলভার। জিহাদবাহিনী দ্রুত গতিতে সম্মুখের অবরোধ তছনছ করে দিলে, তখন সেই ছত্রভঙ্গ, দিশাহারা বাহিনীর উপর গড়িয়ে পড়ে অজগরসম বিপুল তুর্কিবাহিনীর ভার। গিলে খেতে থাকে সব।

সমতল প্রান্তরে অপেক্ষমাণ জয়পালের বিশাল সেনাদল। কিন্তু নিদ্রা তখনও তাদের চোখেমুখে, এই আচমকা আক্রমণ! আমন্ত্রিত রাজারাও খানিক অপ্রস্তুত। রাজপুত ঘোড়সওয়ার, কাশ্মীররাজের সজ্জিত বাহিনী বড়ো ভরসা, প্রথমজন তাদের দেহ ভার ও বিক্রমে আর দ্বিতীয়জন পার্বত্য যুদ্ধের বিশারদ। এরাই তাঁর আজকের যুদ্ধের ভাগ্যনির্ণায়ক।

এ যুদ্ধ ভূমির নয়। সম্মান ও উত্তরাধিকারের... প্রথম যুদ্ধের লজ্জাজনক চুক্তির প্রতিকার।

 

সম্মুখে দশ হাজার সৈন্য পদাতিক, অপেক্ষা করে আক্রমণের। মাটি কাঁপিয়ে বজ্রপাতের মতো পার্বত্যঝড়ের মতো ঝাঁপিয়ে পড়ে জিহাদবাহিনী।

অল্প সময়েই পদাতিকবাহিনী বুঝতে পারে, এরা তাদের মতো সংখ্যায় বিপুল নয়, যুদ্ধবিদ্যায় বিপুল অর্থাৎ যুদ্ধের কারিগর।

অশ্বারোহী তুর্কীরা বৃত্তাকারে ছুটে আসে। তির নিক্ষেপ করে আবার বৃত্ত রচনা করে দ্রুত ফিরে যায়। সৈন্যরা হতভম্ব হয়। আর তখনই সেই বৃত্তের ভিতর থেকে বেরিয়ে আসে অসিধারী তুর্কিরা। তারপর সাক্ষাৎ তুর্কী-নাচন। সম্ভবত, এই বাগধারাটির জন্ম এই কারণেই।

অন্যদিকে, জয়পালের পদাতিকদের অধিকাংশই ছিল মধ্য ও নিম্নবর্ণের কৃষকপুত্র। ধান-গম চাষের ফাঁকে যুদ্ধাভ্যাস করত। কিন্তু যুদ্ধের কারিগর নয় তারা।

ভেঙে পড়তে লাগল তাদের অবরোধ। তবুও পশ্চাতের হস্তীবাহিনীর প্রস্তুতির জন্য মাটি কামড়ে পড়ে রইল তারা। দিনের দেড় প্রহরে পতন হল তাদের।

বিশালবপু রণহস্তীদের লৌজবর্ম ঝলমল করে উঠল প্রথম সূর্যরশ্মিতে। প্রাঙ্গণে প্রবেশ করল চলমান দুর্গরা। এই হস্তীবাহিনী ছিল জয়পালের সেনাবাহিনীর গর্ব ও শক্তির প্রতীক।

এতক্ষণ তুর্কিসেনারা গতিশীল যুদ্ধে, দ্রুত আক্রমণ ও পশ্চাদপসরণের কৌশলে নাস্তানাবুদ করে রেখেছিল পদাতিক দলকে। কিন্তু হস্তীবাহিনীর সামনে তারা অসহায় হয়ে পড়ল।

ঘোড়া ভয়ে এগোয় না। এদের গর্জনে প্রকম্পিত হয় ভূমি, আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে ঘোড়সওয়ারদের ভিতর। এক-একটি হাতি যেন যুদ্ধদেবতা। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে মারা পড়তে হবে।

আসব পান করিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে তাদের। পাগলের মতো ধেয়ে যাচ্ছে। শুঁড়ের ফাঁসে তুলে আছাড় মারছে একজন ঘোড়সওয়ারকে। পিষে মারে তাদের।

 

মামুদের পিতা সুবুক্তিগিন রাজা জয়পালের থেকে পূর্ব যুদ্ধ বাবদ পঞ্চাশটি হাতি আদায় করেছিলেন। কিন্তু তাদের ব্যবহার করতে ভয় পেলেন। শুনেছেন, হাতি নাকি ভয়ানক স্মৃতিধর প্রাণী, যদি তারা তার পূর্বতন প্রভুকে চিনতে পারে বিপদ।

সৈনিকদের মনোবল বাড়াতে মামুদ নিজেই জয়পালের হস্তীবাহিনীর ভেদ করার চেষ্টা করেন ও বাধাপ্রাপ্ত হন। মামুদ পশ্চাদপসরণ করতে বাধ্য হন।

কিন্তু ততক্ষণে মামুদের বাহিনী ডান দিক ভেঙে ঢুকে পড়েছে। গজনির তিরন্দাজরা রীতি বদলাল। অগ্নিসংযুক্ত-তির ছোড়া শুরু করল। ভীত-সন্ত্রস্ত হস্তীদল উন্মত্তের ন্যায় পিছু হটল আর সেই সাথে পিষে যেতে লাগল জয়পালের সেনাদল।

 

তৃতীয় প্রহরের মধ্যে যুদ্ধের ভাগ্য নির্ধারিত হয়। হিন্দুশাহি-বাহিনী ছত্রভঙ্গ হয়। জয়পাল বন্দি হন নিজ পনেরো পুত্র ও নাতির সঙ্গে। ‘তাঁদেরকে বন্দি করব’, এই ভাবনা নিয়েই মামুদ প্রবেশ করেন ওয়াইহিন্দ।

পিছনে পড়ে রয় রক্তাক্ত রণক্ষেত্র। জয়পালের সামনেই লুট হয় শত শত সোনার মুদ্রা, রাজকীয় রত্ন, যুদ্ধহস্তী। লুণ্ঠিত হয় নারীর সম্মান আর জয়পাল? লজ্জাজনক সন্ধি হয়, আড়াই লক্ষ দিনার ও অবশিষ্ট বেঁচে থাকা রণহস্তীদের সমর্পণ।

ক্ষুদ্র, সংকুচিত একচিলতে কচ্ছের রাজত্বে ফিরে এলেন বটে কিন্তু পরাজয়ের গ্লানিতে সিংহাসন পুত্রকে দিয়ে চিতায় আত্মাহুতি দিলেন।

 

আমুদরিয়া থেকে সিন্দু উপত্যকা বিস্তীর্ণ ভূমি করতলগত হল গজনভিদের। সেইই প্রথম, এরপর ক্রমান্বয়ে উত্তম পশ্চিম থেকে বৃহত্তর ভারতবর্ষে প্রবেশ করতে লাগল তারা। হিন্দুশাহি সাম্রাজ্যের পতন ও লঘমনের যুদ্ধ ছিল সূচনা। পেশওয়ারের এই যুদ্ধ দিল তাদের পা রাখার জায়গা। যে-সূচনা সুবুক্তিগিন করেছিলেন, তাঁর পুত্র মামুদ তা সম্পূর্ণ করল। সে এরপর কচ্ছ-এর অবরোধ ভেঙে সোমনাথ ধ্বংস করবে, আর কয়েক বছরের অপেক্ষা। এই যুদ্ধ-পরবর্তী ভারতবর্ষের রাজনৈতিক, সামরিক ও সাংস্কৃতিক রূপরেখা আমূল বদলে দিল।

 

প্রেক্ষাপট

 

দশম শতাব্দীতে, গজনির সুলতান সুবুক্তিগিন (রাজত্বকাল: ৯৭৭–৯৯৭ খ্রিস্টাব্দ) আফগানিস্তানের গজনিকে তার রাজধানী করে এক শক্তিশালী সাম্রাজ্য গড়ে তোলেন।

সুবুক্তিগিন তুর্কি দাস সৈনিক ছিলেন। বুখারার সামানিদ আমিরের অধীনে কাজ করতে করতে শেষপর্যন্ত গজনি-র স্বাধীন শাসক হয়ে ওঠেন। উচ্চাকাঙ্ক্ষী ও আগ্রাসী সুবুক্তিগিন আমুদরিয়া থেকে মুসলিম সাম্রাজ্যকে পূর্ব দিকে ঠেলতে শুরু করেন এবং ভারত উপমহাদেশের উত্তর-পশ্চিম অঞ্চলের দোরগোড়ায় এসে উপস্থিত হন।

 

অন্যদিকে, হিন্দুশাহি রাজা জয়পাল কাবুল ও পেশওয়ার অঞ্চলভুক্ত এক বিস্তৃত রাজ্যের অধিপতি ছিলেন। ওয়াইহিন্দ, কচ্ছ, তদানিন্তন লাহোর তাঁর গুরুত্বপূর্ণ নগরগুলির অন্যতম। স্বাভাবিক সংঘর্ষ বাধল।

 সীমান্তবর্তী খাইবার পাস ও লাঘমান উপত্যকা সেইসময় ছিল কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল। জয়পাল প্রথমে সুবুক্তিগিনের বিরুদ্ধে এক অভিযান চালান। কিন্তু পরিণামে ৯৮৬ খ্রিস্টাব্দে লঘমনের প্রথম যুদ্ধে সুবুক্তিগিন জয়পালকে পরাজিত করেন এবং তাঁকে কর দিতে বাধ্য করেন।

তবে জয়পাল পরবর্তীতে সেই চুক্তি ভঙ্গ করে নতুন করে হামলা চালালে সুবুক্তিগিন দ্বিতীয় বার তার উপর চড়াও হন। এই লড়াইয়ে জয়পাল পরাজিত হন এবং লাহোর অঞ্চলের উপর গজনির কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা পায়। এবং সবশেষে পেশওয়ার যুদ্ধ।

 

সুবুক্তিগিন ছিলেন দাস হতে রাজা। আর হিন্দুশাহি প্রায় আড়াইশত বছরের গৌরবময় অধ্যায়। তার উপর ধর্মীয় প্ররোচনা ও আগ্রাসন। তাই এই যুদ্ধ শুধু অস্ত্রের ছিল না— এ ছিল আত্মপরিচয়ের, সাহসের, মর্যাদার সংঘর্ষ।

জয়পাল হেরেছেন। অনেক জল গড়িয়েছে সিন্ধু নদ দিয়ে, খাইবারের পথে বহু অভিযাত্রী পদচিহ্ন রেখে গেছেন। কিন্তু আজও কাবুল ও লাহোরের পার্বত্যগুহায় খোদিত আছে সেই রণহস্তীদের প্রতিকৃতি— আজও চলেছে অতীতের সেই বীরগাথা।


______________________________________________________________________________

প্রতিরোধে বীর ভারত-সন্তান ধারাবাহিকটির আগের পর্বগুলি পড়ুন:

প্রথম পর্ব:  https://blogs.antareep.in/2025/06/blog-post.html

দ্বিতীয় পর্ব:  https://blogs.antareep.in/2025/06/blog-post_13.html

তৃতীয় পর্ব:  https://blogs.antareep.in/2025/06/blog-post_20.html

চতুর্থ পর্ব:  https://blogs.antareep.in/2025/06/blog-post_24.html

পঞ্চম পর্ব:  https://blogs.antareep.in/2025/06/blog-post_24.html

ষষ্ঠ পর্ব:  https://blogs.antareep.in/2025/07/blog-post.html 

সপ্তম পর্ব: https://blogs.antareep.in/2025/07/blog-post_12.html

অষ্টম পর্ব: https://blogs.antareep.in/2025/07/blog-post_19.html

 

মন্তব্যসমূহ