প্রতিরোধে বীর ভারত-সন্তান - তমোঘ্ন নস্কর
প্রতিরোধে বীর ভারত-সন্তান
তমোঘ্ন নস্কর
সপ্তদশ পর্ব: স্বাধীন ভারতের অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই: অপারেশন পোলো
১৩ সেপ্টেম্বর, ১৯৪৮, ভোর চারটে
ভারতীয়
সেনাবাহিনী হায়দরাবাদ স্টেটের সীমানায় প্রবেশ করে এবং পাঁচ
দিক থেকে হায়দরাবাদের উপর ঝাঁপিয়ে
পড়ে। আকাশ কাঁপিয়ে গর্জে ওঠে হকার টেমপেস্ট বিমান। মাটি কাঁপে ভারতীয় সৈন্যের সম্মিলিত শৃঙ্খলাবদ্ধ মার্চে।
ভাইস মার্শাল মুখার্জির নেতৃত্বে পুনা বেস থেকে উড়ে এসে
বিমানগুলো হায়দরাবাদের বিমানঘাঁটি ও যুদ্ধ
সরঞ্জামগুলি তছনছ করতে থাকে।
পশ্চিম দিক থেকে মেজর জেনারেল চৌধুরীর ফোর্স এগিয়ে আসে।
তাঁর নেতৃত্বাধীন প্রথম মুখোমুখি সংঘাতটি হয় সোলাপুর-সেকেন্দ্রাবাদ জাতীয় সড়কের উপর অবস্থিত নলদুর্গের অবরোধে। একে একে করায়ত্ত হয় বরি নদী ও তার উপরের সেতুটি।
তারপর সেই রাস্তা বেয়ে ভারতীয় সেনাবাহিনী
দুপুর তিনটের মধ্যে হায়দরাবাদের পেটের ভিতর একষট্টি কিলোমিটার ঢুকে পড়ে। উমারগাতে রাজকার সৈনিকদের পতন হয়। দখল হয় শহরটি। সেদিনের
মতো সেখানেই ছাউনি গড়া হয়।
অন্যদিকে, তাঁর নেতৃত্বে
আর-একটি সম্মিলিত বাহিনী খানিকটা দূর তুলজাপুর (নলদুর্গের ৩৪
কিমি দ.প.) থেকে প্রবেশ করে। তুলজাপুর থেকে লোহরা একটার পর একটা এলাকা তাদের পদানত হয়। সোজা, নির্মম, আর অপ্রতিরোধ্য— রাস্তা জুড়ে ঢেউয়ের মতো বদলে যায় সরকারের পতাকা। ত্রিবর্ণরঞ্জিত জাতীয় পতাকায় পতপত করে ওড়ে।
পূর্ব দিক থেকে লেফটেন্যান্ট জেনারেল রুদ্র আক্রমণের
দায়িত্বে ছিলেন। এই দিক তুলনায় সংরক্ষিত
ছিল। হায়দরাবাদের সেনাবাহিনীর ভারী যুদ্ধগাড়িগুলি এখানে অবস্থান করছিল। হায়দ্রাবাদ বাহিনী পাকিস্তান প্রেরিত অর্থে হামবার
এবং স্ট্যাগহাউন্ড
যুদ্ধশকট কিনেছিল। ভারতীয় বাহিনীর বিরুদ্ধে এই যুদ্ধশকটগুলি
তীব্র প্রতিরোধ গড়ে তুলল।
অবশেষে, সকালে সাড়ে আটটায়
সেই স্থান অতিক্রম করে কোডার এবং বিকেলের দিকে হায়দরাবাদের বাহিনীকে মুঙ্গালার বাইরে ঠেলে দিয়ে, ভারতীয় সেনাবাহিনী তাদের পতাকা উড়িয়ে দেয়।
প্রথম দিনের শেষে, ভারতীয়
সেনাবাহিনীর পক্ষে এদের একটি বড়ো জয় ছিল। হায়দরাবাদের ভিতরে অনেকখানি প্রবেশ করতে পেরেছিল তারা। বর্তমান
মহারাষ্ট্রের মানচিত্রের অনেকখানি গড়া হয়ে
গিয়েছিল সেদিন।
১৪ সেপ্টেম্বর, ১৯৪৮
আকাশ-বাতাজ জুড়ে কেবল একটাই শব্দ… বিধ্বংস। জেনারেল চৌধুরীর বাহিনী উমরাগা থেকে রাজেশ্বরের দিকে অগ্রসর হচ্ছিল। আর তাদেরকে আগে
পথ দেখিয়ে নিয়ে যাচ্ছিল টেমপেস্ট
বিমানের বাহিনী। তারা সম্মুখে কয়েকমাইল করে এগিয়ে গিয়ে ফিরে আসছিল রাস্তা পরিস্কার করে।
ভাইস মার্শাল মুখার্জির বিধ্বংসী বিমান বাহিনী রাজেশ্বর ও
তার পারিপার্শ্বিক
অঞ্চলের প্রতিরোধ শেষ করে দেয়। বিনা আয়াসেই স্থলসেনা রাজেশ্বর দখল করে নেয়।
মেজর জেনারেল চৌধুরীর বাহিনী যত দৌলতাবাদের দিকে অগ্রসর
হচ্ছিল,
ভারী হচ্ছিল আক্রমণ।
কিন্তু গুর্খা বাহিনি দারুণ দক্ষতার সঙ্গে সেই আঘাত প্রতিহত করে। এবং ওসমানাবাদ এবং ঔরঙ্গাবাদ দখল করে।
তবে এইদিন পূর্ববর্তী শাখার বাহিনী অর্থাৎ জেনারেল রুদ্রের
দায়িত্বাধীন
বাহিনী কঠিন আঘাতের সম্মুখীন হয়। সূর্যপেটের ছ’কিলোমিটার
আগে তারা আটকে থাকে দিনভর।
১৫ সেপ্টেম্বর, ১৯৪৮
সকালে
মেজর জেনারেল চৌধুরীর বাহিনী ঔরঙ্গাবাদের বাকি অংশ— জালনা, মোমিনাবাদ ভারতের থেকে দ্রুত ছিনিয়ে নেয়।
পূর্ব শাখার জেনারেল রুদ্রের দলটিকে সাপোর্ট দিতে এগিয়ে
আসে টেমপেস্ট বিমানের বিধ্বংসী বাহিনী।
সূর্যপেট মুক্ত করে সামনে এগিয়ে, খাম্মাম অবধি দখল করে
নেয় তারা।
পিছু ঘটতে থাকা হায়দরাবাদি বাহিনী মুচি নদীর উপরের
গুরুত্বপূর্ণ সেতুটি ভেঙে দেয়। কিন্তু
বৃথা চেষ্টা। ভারতীয় বাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং ডিভিশন দ্রুত সারিয়ে ফেলে এগিয়ে যায় জাহিরাবাদের দিকে…
১৬ সেপ্টেম্বর, ১৯৪৮
দুপুরের
মধ্যে জেনারেল চৌধুরীর টাস্কফোর্স জাহিরাবাদ দখল করে। তবে
জাহিরাবাদ দখল করা অতখানি সোজা ছিল না।
হায়দরাবাদকে সুরক্ষিত করার জন্য মাইন এবং সড়কের দু’পাশে অ্যাম্বুশের পরিকল্পনা করা ছিল।
প্রাথমিকভাবে গতি রুদ্ধ হয় এবং ভারী অ্যাম্বুশে বেশ কিছু
ভারতীয় সেনা
প্রাণ হারায়। এই সময় লেফটেন্যান্ট কর্নেল রাম সিংয়ের ৭৫
এমএম ফিল্ড কামানের ব্যবহারের সিদ্ধান্ত, যুদ্ধের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। জাহিরাবাদ দখল হলে বিদর
উন্মুক্ত হয়ে পড়েছিল ভারতীয় বাহিনীর
সামনে। জয়— সে কেবল সামান্য সময়ের অপেক্ষা।
এর মধ্যে হায়দরাবাদের নিজাম তাঁর প্রধানমন্ত্রী নবাব লায়েক
আলিকে পদত্যাগে
বাধ্য করেন।
১৭ সেপ্টেম্বর, ১৯৪৮
কাক
ডাকার আগেই ভারতীয় সেনার পূর্ব ও পশ্চিম শাখা বিদর অঞ্চলে
প্রবেশ করে।
হায়দরাবাদ চারদিক থেকে অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে।
জেনারেল চৌধুরী অবস্থান নিলেন চিত্তলে, হায়দরাবাদ থেকে ষাট কিলোমিটার দূরে। আর জেনারেল রুদ্র অবস্থান নিলেন হিঙ্গুলিতে, সেকেন্দ্রাবাদের পাশে।
শহর থেকে খবর আসতে লাগল— হায়দরাবাদের প্রতিরোধ ভেঙে পড়েছে।
রাজকার বাহিনীতে
এখন ভাঙন ধরেছে। এখন কেবল অপেক্ষা।
আত্মসমর্পণ
১৭ সেপ্টেম্বর, ১৯৪৮, বিকেল পাঁচটা
হায়দরাবাদের
নিজাম ভারতের এজেন্ট-জেনারেল কে এম মুনশির সঙ্গে দেখা করেন চারটেয়। স্বল্প আলোচনার পর বিকেল পাঁচটায়
যুদ্ধবিরতি ঘোষণা হয়। শোনা যায়, নিজাম মুনশিজিকে
বলেছিলেন যে,
শকুনরা আমাকে প্ররোচিত করেছিল। তারা সবাই আমায় ছেড়ে গেছে; আমি হতাশ এবং অসহায়।
বদলে গেল অধিকার। যুদ্ধের গন্ধ, তিক্ত স্মৃতি নিয়ে স্থির হয়ে রইল হায়দরাবাদের পতাকা; সেও বুঝি জানে, তার দিন শেষ হয়ে এসেছে।
বন্দুকের গর্জন থেমে যায়। তবু্ও লাল হয়ে আছে আকাশ। কয়েকটি
প্রাসাদ-মিনার
তখনও জ্বলছে। ভারত চেষ্টা করেছিল যথাসম্ভব কম ক্ষয়ক্ষতির
মধ্যে দিয়ে হায়দরাবাদ দখল করতে কারণ, নিজের মানুষদের মারা সম্ভব নয়।
১৮ সেপ্টেম্বর, ১৯৪৮
প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিলেন। সেই ভাষণেও কিন্তু
একই কথাই বলা ছিল—
“It
is natural that we should rejoice at this swift termination of the action we
undertook after prolonged and painful thought and each deliberation. As I have
repeatedly said we are men of peace, hating war and the last thing we desire is
to come into an armed conflict with anyone. Nevertheless, circumstances which
you will know well, compelled us to take this action in Hyderabad. Fortunately,
it was brief and we return with relief to the paths of peace again.”
পরে ২৩ সেপ্টেম্বর শেষ ভাষণ দেন হায়দরাবাদের নিজাম।
বিধ্বস্ত নবাব বলেন,
এই সকল আমার উপরে চাপিয়ে দেওয়া হয়েছিল। আমার পূর্বতন
সুযোগ্য প্রধানমন্ত্রী ছতরির নবাবকে সরিয়ে
লায়েক আলি এবং উগ্রপন্থায় বিশ্বাসী ধুরন্ধর কাশেম রিজভিকে আমার ঘাড়ে চাপিয়ে দিয়ে জোরপূর্বক আমাকে ভারতের বিরোধিতা করতে বাধ্য
করা হয়।
এই যে এত কথা
বললাম,
কিন্তু অপারেশন পোলোর প্রেক্ষাপটটাই তো বলা হয়নি। সেটাই
বলি চট করে।
অপারেশন পোলো কী? কেন?
১৯৪৮ সালের ভারতবর্ষে স্বাধীনতার আনন্দের মাঝেই এক নতুন
সংকট দেখা দেয়।
বহু দেশীয় রাজ্য ভারত বা পাকিস্তানে যোগ দিলেও, হায়দরাবাদের নিজাম মীর ওসমান আলি খান আসফ জাহ (সপ্তম) স্বাধীন থাকার স্বপ্ন আঁকড়ে ধরেন। কিন্তু
বাস্তব ছিল অন্যরকম। তেলেঙ্গানা আন্দোলন ক্রমে
তীব্র হয়ে উঠছে,
আর সেই অস্থিরতার সুযোগে মুসলিম চরমপন্থী নেতা কাসিম রাজভি ও তাঁর রাজাকার বাহিনী ক্ষমতার শিখরে উঠতে শুরু করে।
রাজাকারদের পৃষ্ঠপোষকতা দিচ্ছিল MIM রাজনৈতিক দল, যারা
হায়দরাবাদকে একটি
খাঁটি মুসলিম রাষ্ট্রে পরিণত করতে চাইছিল। হিন্দু
জনসংখ্যাকে জোর করে ধর্মান্তরিত বা নিশ্চিহ্ন
করার মাধ্যমে দারুণ অত্যাচার শুরু করে তারা।
১৯৪৭ সালে নিজাম ভারতের সঙ্গে একটি Standstill
Agreement করতে বাধ্য হলেও, রাজাকার ও
তাদের নেতারা এই সমঝোতা প্রত্যাখ্যান করে উত্তেজনা ছড়াতে থাকে। নিজামের প্রধানমন্ত্রীও শেষ পর্যন্ত এই চুক্তি ভেঙে দেওয়ার ঘোষণা
দেন। এবং নিজামের তদানীন্তন প্রধানমন্ত্রী
ছতরির নবাবকে অপসারিত ও বন্দি করে কাসিম রাজভির দলবল।
এদিকে সুযোগ বুঝে, পাকিস্তান
পনেরো মিলিয়ন পাউন্ড সহায়তা দিয়ে নিজাম বাহিনীর সমান্তরালে রাজাকারদের আধা-সরকারি সেনাবাহিনী গড়ে তুলতে সাহায্য করে।
নিজাম
ভারতীয় মুদ্রা প্রত্যাহার করে পাকিস্তানের উপর নির্ভরশীল
হন। তাদের সঙ্গে সম্পর্ক বাড়াতে থাকেন। পাল্লা
দিয়ে বাড়তে থাকে রাজাকারদের উগ্রতা। এদিকে অবস্থান এমন ছিল যে, হায়দরাবাদকে ভারতের মধ্যে থেকে আলাদা করা অসম্ভব। তাই, হায়দরাবাদ ভারতের ভিতরে থেকেও ক্রমশ ভারতের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছিল।
এই অবস্থায় ভারতের কাছে আর কোনও পথ খোলা ছিল না। দেশের
অখণ্ডতা রক্ষা ও
রাজাকারদের সন্ত্রাস শেষ করতে হায়দরাবাদের ভারতভুক্তি
অপরিহার্য হয়ে ওঠে। এভাবেই ইতিহাসের মঞ্চে
আবির্ভূত হয় অপারেশন পোলো।
সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল সর্বদলীয় বৈঠকে ঘোষণা করেন, ভারতীয় সেনাবাহিনী হায়দরাবাদ আক্রমণ করবে। গর্ভনর জেনারেল চক্রবর্তী রাজাগোপালাচারী নিজামকে
আনুষ্ঠানিকভাবে
টেলিগ্রামে জানিয়ে দেন, ভারত আর বসে
থাকবে না। সূচিত হল অপারেশন পোলো।
সবশেষে একটুখানি
বাঙালি বন্দনা করে যাই,
অপারেশন-নেতৃত্বে তিন কমান্ডার, যাঁদের নাম
এতক্ষণ বলছিলাম:
▪️ জেনারেল চৌধুরী: চিফ অফ আর্মি স্টাফ জয়ন্ত নাথ চৌধুরী, বিএসএফের প্রতিষ্ঠাতা
▪️ জেনারেল রুদ্র: জেনারেল কমান্ডিং অফিসার অজিত রুদ্র
▪️ এয়ার মার্শাল মুখার্জি: এয়ার কমান্ডার ইন চিফ সুব্রত মুখার্জি
এঁরা তিনজনই বাঙালি। বাঙালির বাহুতে শক্তি, হৃদয়ে শক্তি; শক্তিস্বরূপিনী কালীর উপাসক আমরা। কালক্রমে হয়তো ক্ষয় হয়েছে খানিকটা।
কিন্তু ভারতবর্ষের জন্য বাঙালির অবদান কখনওই
ভোলা যাবে না। আজ ঠিক সাতাত্তর বছর পর, এ লড়াই আজও
সমান প্রাসঙ্গিক।
তথ্যঋণ:
১.
বাংলা গবেষক শ্রী সৌম্যদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়।
২.
অপারেশন পোলো বিষয়ে বিভিন্ন আর্টিকেল।
______________________________________________________________________________
প্রতিরোধে বীর ভারত-সন্তান ধারাবাহিকটির আগের পর্বগুলি পড়ুন:
প্রথম পর্ব: https://blogs.antareep.in/2025/06/blog-post.html
দ্বিতীয় পর্ব: https://blogs.antareep.in/2025/06/blog-post_13.html
তৃতীয় পর্ব: https://blogs.antareep.in/2025/06/blog-post_20.html
চতুর্থ পর্ব: https://blogs.antareep.in/2025/06/blog-post_24.html
পঞ্চম পর্ব: https://blogs.antareep.in/2025/06/blog-post_24.html
ষষ্ঠ পর্ব: https://blogs.antareep.in/2025/07/blog-post.html
সপ্তম পর্ব: https://blogs.antareep.in/2025/07/blog-post_12.html
অষ্টম পর্ব: https://blogs.antareep.in/2025/07/blog-post_19.html
নবম পর্ব: https://blogs.antareep.in/2025/07/blog-post_27.html
দশম পর্ব: https://blogs.antareep.in/2025/07/blog-post_27.html
একাদশ পর্ব: https://blogs.antareep.in/2025/08/blog-post_88.html
দ্বাদশ পর্ব: https://blogs.antareep.in/2025/08/blog-post_15.html
ত্রয়োদশ পর্ব: https://blogs.antareep.in/2025/08/blog-post_24.html
চতুর্দশ পর্ব: https://blogs.antareep.in/2025/08/blog-post_30.html
পঞ্চদশ পর্ব: https://blogs.antareep.in/2025/09/blog-post.html
ষোড়শ পর্ব: https://blogs.antareep.in/2025/09/blog-post_13.html
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন