কসাইখানার কবিয়াল - সুশোভন চৌধুরী

 



কসাইখানার কবিয়াল


সুশোভন চৌধুরী


চান্দোয়া-ম্যাকলাস্কিগঞ্জ রোড ধরে ছোটোনাগপুর মালভূমির পাহাড়-জঙ্গল ভেদ করে রাতের অন্ধকারে ঝড়ের গতিতে ছুটে চলেছি আমরা চারজন টিপ টিপ বৃষ্টির মধ্যে দু’টি মোটরবাইকে সওয়ার হয়ে চলেছি আমরা, উৎকৃষ্ট ‘পাঁঠার মাংসের’ সন্ধানে! ব্যপারটা খুলেই বলি বায়োটেকনোলজির পোস্ট-গ্র‍্যাজুয়েশন করতে বছর দুয়েক মধ্যপ্রদেশের জব্বলপুরে কাটাতে হয়েছিল আমায় মধ্যভারত মূলত একটি নিরামিশাষী অঞ্চল হলেও হস্টেলের ছেলে-ছোকরাদের একটু ‘চিকেন-মছলি’ খাওয়ার ইচ্ছা হত মাঝেমধ্যে আমি একজন বাঙালি এবং হস্টেলে নিজের রুমে প্রায়ই চিকেন বা মাছ রান্না করে খাই, এই খবরটা চাউর হতে বেশি সময় নেয়নি ছেলের দল রাতবিরেতে চুপিসারে আসত, আর বলত, “দাদা, হামলোগ ব্রাহ্মণ হ্যায় তো ক্যায়া হুয়া, ঘরওয়ালো কো থোড়াই পাতা চলেগা? ইয়ে লে, আজ এক কিলো চিকেন লায়েঁ হে বড়িয়া বঙ্গালি চিকেন কারি খিলা দে ইয়ার! কেয়া মস্ত বানাতা হ্যায় তু!”

বলা বাহুল্য, আমি বেশ খুশিই হতুম তৎক্ষণাৎ ঘর বন্ধ করে ‘কঠোরভাবে শাকাহারী’ হস্টেলে চুপিসারে চলত মাংস রান্নার আয়োজন যদিও আমি কলেজ টুর্নামেন্টে কখনও বাঁ হাতে ব্যাট করিনি, এই বাঙালি আমিষ রান্নার সুবাদে অচিরেই আমি হয়ে উঠেছিলাম সিনিয়র-জুনিয়র সকলের প্রিয়, অবিসংবাদী ‘দাদা’

প্ল্যান্ট-বায়োটেকের ব্রিজমোহন মিশ্র, ওরফে বিরজু ছিল আমার হাতের রান্না-ভক্তদের অন্যতম সেকেন্ড সেমিস্টার পরীক্ষা হয়ে যাবার পর পনেরো দিনের ছুটিতে যখন বাড়ি আসব বলে ট্রেনের রিজার্ভেশন করতে যাচ্ছি, বিরজু বলল, “দাদা, তু প্যাহলে মেরা ঘর হো কর ফির কলকাত্তা চল! ওহ শক্তিপুঞ্জ এক্সপ্রেস চান্দোয়া হোতে হুয়ে যাতি হ্যায় চান্দোয়া মে মেরে ঘর পে এক দিন রুক যা, দুসরে দিন আগলি গাড়ি পে চান্দোয়া টু হাওড়া রিজার্ভেশন বানা লে তেরে হাতোঁ সে চিকেন, মছলি বহুত খায়া, একবার মাটন ভি খানা হ্যায় ইয়ার! উধার স্যাম-আঙ্কল কা বড়িয়া গোট-ফার্ম হ্যায় মস্ত্ মাটন মিলতা হ্যায় আঙ্কল ভি মাটন বানাতে হ্যাঁয়, লেকিন উতনি আচ্ছি নেহি বনতি; দারু মিলাতা হ্যাঁয় মাটন মে! তু যায়েগা তো স্যাম-আঙ্কল কা কটেজ মে হি বানায়েঙ্গে, মাম্মি-পাপা কো কুছ নেহি পাতা চলেগা! তু বাস চল, ইয়ার

আমি বিরজুর প্রস্তাবে সম্মত হয়েছিলাম, শুধু খাসির মাংসের কারণে নয়, এই স্যাম-আঙ্কেলের জন্য বিরজু জানিয়েছিল, স্যাম-আঙ্কল চান্দোয়া থেকে পঁচিশ কিলোমিটার দূরে ম্যাকলাস্কিগঞ্জ নামক ছবির মতো সুন্দর একটা জায়গায় থাকেন, এবং তিনি নাকি বাংলায় কথা বলতে পারেন! ম্যাকলাস্কিগঞ্জের নাম আমি আগেই শুনেছিলাম (রবিঠাকুরের সিমকার্ড গল্পটি দ্রষ্টব্য) হঠাৎ সেখানে যাবার ইচ্ছা হল সেদিন ছিল ২০০৯ সালের ১৫ আগস্ট স্বাধীনতা দিবস আগের রাতে জব্বলপুর থেকে হাওড়াগামী শক্তিপুঞ্জ এক্সপ্রেসে চেপে আমরা পরেরদিন দুপুরে ঝাড়খন্ডের টোরি জাংশনে নামি এটাই চান্দোয়া শহরের রেল স্টেশন এখানে বিরজুদের মস্ত বাড়ি বিরজুর বাবা একটি স্থানীয় সিমেন্ট কারখানার ম্যানেজার বিরজুদের বাড়িতে ফ্রেশ হয়ে, বিকেলটুকু কোনরকমে ওদের বাড়িতে কাটিয়ে দু’টি বাইক নিয়ে আমরা বেড়িয়ে পড়লাম ম্যাকলাস্কিগঞ্জের উদ্দেশে একটি বাইকে আমি আর বিরজু, অন্য বাইকে বিরজুর দুই স্কুলের বন্ধু সাহিল ও বিবেক

পাহাড়, নদী, ঘন জঙ্গলের বুক চিরে, সি আর পি এফ-এর ক্যাম্প ছাড়িয়ে একটা ছোট্ট গ্রামে এক মুদি দোকানের রোয়াকে দাঁড়াতে বাধ্য হলাম আমরা বৃষ্টিটা জোরে আসছে গ্রামের নামটি বড় সুন্দর‘মহুয়া-মিলন’ (স্থানীয়েরা বলে, মহুয়ামিলাঁ) এখানেই হঠাৎ করে দেখা হয়ে গেল বুড়ো স্যাম-আঙ্কলের সঙ্গে বিরজু তাঁকে দেখতে পেল উল্টোদিকের দেশি মদের দোকান থেকে বোতল হাতে বের হয়ে আসতে বিরজু চেঁচিয়ে আঙ্কলের নাম ধরে ডাকতেই দোকানের টিমটিমে আলোতেও তিনি ঠিক চিনলেন বিরজুকে সহাস্যে এগিয়ে এলেন আমার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিল বিরজু

আমি বাঙালি, এবং কলকাতায় থাকি শুনে যেন হঠাৎ আত্মবিস্মৃত হয়ে গেলেন বৃদ্ধ কিছুক্ষণ একদৃষ্টে আমার দিকে তাকিয়ে থেকে তিনি পরিষ্কার বাংলায় বললেন, “তুমি বাঙালি? কী আশ্চর্য! আজকের দিনেই তুমি এলে, হ্যাঁ! জিসাস, ইউ আর গ্রেট! চলো চলো... তোমরা আমার অতিথি... জমিয়ে গল্প করা যাবে...” বলেই নিজের স্কুটারে স্টার্ট দিলেন এখান থেকে ম্যাকলাস্কিগঞ্জ মাত্র পাঁচ কিমি পথ

 

ম্যাকলাস্কিগঞ্জ ‘মিনি লন্ডন’, ‘ইংলিশম্যানস প্যারাডাইস’, ‘ফেইলড ইউটোপিয়া’... বিভিন্ন পরস্পরবিরোধী নামে ডাকা হয় এই গঞ্জটিকে ১৯৩০-এর দশকে আর্নেস্ট টিমোথি ম্যাকলাস্কি নামক এক সাহেব শুধুমাত্র অ্যাংলো-ইন্ডিয়ানদের বসবাসের জন্য আশেপাশের নটি গ্রাম নিয়ে এই কলোনির পত্তন করেন ভারতবর্ষের বিভিন্ন অঞ্চলে বসবাসকারী অ্যাংলো-ইন্ডিয়ান পরিবারগুলিকে এখানে বাড়ি তৈরি করে থাকার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয় স্বাস্থ্যকর আবহাওয়া, মনোরম পরিবেশ, পাহাড়-জঙ্গল-ঝরনা ঘেরা স্থানটিতে তৈরি হয় ইউরোপীয় ধাঁচের কটেজ, পাব, ক্লাব, শিকারের জন্য ওয়াচ টাওয়ার, চার্চ, শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান প্রথমটায় দলে দলে অ্যাংলো-ইন্ডিয়ানরা আসতে থাকেন, সত্যিই ‘মিনি লন্ডন’ হয়ে ওঠে জায়গাটি কিন্তু দেশ স্বাধীন হবার সঙ্গে সঙ্গেই এই কলোনি তার কৌলীন্য হারাতে থাকে এর মূলে ছিল ভারতবর্ষে অ্যাংলো-ইন্ডিয়ান জনগোষ্ঠীর অস্তিত্বের সংকট সাধারণভাবে কোনও ভারতীয়ের পিতৃকূলের কোনও ব্যক্তি ব্রিটিশ বা ব্রিটিশ বংশোদ্ভূত হলে, এবং সেই ব্যক্তি ভারতের স্থায়ী বাসিন্দা হলে তাঁকে অ্যাংলো-ইন্ডিয়ান বলা হয় (অনেক ক্ষেত্রে অবশ্য ভারতে জন্মানো ও ভারতেই বড় হয়ে ওঠা খাঁটি ইংরেজকেও অ্যাংলো-ইন্ডিয়ান নামে ডাকা হয়) ভারতে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সময় থেকে এই সংকর জনগোষ্ঠীর উদ্ভব এদেশে একসময় এঁদের সংখ্যা কুড়ি লক্ষ ছাড়িয়েছিল স্বভাবগতভাবে এঁরা ছিলেন সাহেব ইংরেজি বেশিরভাগের মাতৃভাষা ভারতবাসী হয়েও ব্রিটিশ কালচার ও ‘উন্নত জীবনশৈলীর’ অনুসারী ছিলেন এঁরা তাই হয়তো পুরোপুরি ভারতীয় হয়ে উঠতে পারেননি স্বাধীনতার সময় বেশ দোলাচলে পড়ে যায় তাঁদের অবস্থান ও আনুগত্য স্বদেশবাসীর থেকে ক্রমেই দূরে সরে যাবার আশঙ্কায় একের পর এক পরিবার এই দেশ ছেড়ে ইউরোপ-অস্ট্রেলিয়ায় পাড়ি জমাতে থাকে; শুরু হয় নিঃশব্দ ‘এক্সোডাস’ সাধের ম্যাকলাস্কিগঞ্জ পরিণত হয় পতিতভূমিতে তবুও অনেকে আজও রয়ে গেছেন এই দেশটাকে ভালোবেসে ম্যাকলাস্কিগঞ্জের ‘কসাই’, বৃদ্ধ স্যাম-আঙ্কল তাঁদেরই একজন

স্যাম-আঙ্কলের আসল নাম, স্যামুয়েল বেস্ট এখানে আসার পথে বিরজুর মুখে শুনেছিলাম, স্যাম-আঙ্কল বিয়ে-থা করেননি তাঁর তিনকুলে কেউ নেই মস্ত ভাঙাচোরা কটেজে তিনি একাই থাকেন বাসস্থানের লাগোয়া ছাগল ও শূকরের ফার্ম হাউস ফার্ম হাউসের মুখেই মিট শপ দুজন কর্মীর সাহায্যে মিট শপটি চালান আঙ্কল আমরা রাত আটটা নাগাদ পৌঁছে প্রথমে মিট শপে ঢুকলাম বিরজুর ফরমাস মতো দেড় কিলো বারবারি ছাগলের মাংস কাটতে বললেন আঙ্কল দোকানের ক্যাশ বাক্সের উপরে একটা পুরোনো হয়ে যাওয়া গীতবিতান চোখে পড়ল আমার বিশ্বভারতী সংস্করণ

“আপনি রবীন্দ্রনাথ পড়েন?

জিজ্ঞাসা করতে হাসলেন আঙ্কল বইটা হাতে তুলে নিয়ে বললেন, “শুধু পড়ি না, একটু-আধটু গানও করি রাতে তোমায় শোনাব।”

এরপর আঙ্কলের বসার ঘরে ঢুকে আর এক প্রস্থ অবাক হলাম দেওয়ালের চার দিকে পুরানো দিনের কিছু অয়েল পেইন্টিং বেশিরভাগ ইংরেজ সাহেবদের পোট্রেট সম্ভবত আঙ্কলের পূর্বসূরিদের পোট্রেট ওগুলো অন্য তিনটি ছবির একটি রবীন্দ্রনাথ, একটি স্বামী বিবেকানন্দ ও একটি নেতাজী সুভাষচন্দ্রের আঙ্কল তো দেখছি পুরোদস্তুর বাঙালি!

রান্না ও ডিনার শেষ হতে রাত দশটা বাজল আমার রান্না করা ঝাল ঝাল মাটন কারির প্রশংসায় পঞ্চমুখ বিরজুরা পেট ভর্তি করে খাসির মাংস খেয়ে কে আর জেগে থাকতে পারে?

“এ দাদা, তু আপনা আঙ্কলকে সাথ থোড়া বাতচিত করলে, হামলোগ শোনে যা রাহে হেঁ” বলেই পাশের ঘরে সেঁধিয়ে গেল ওরা তিনজন

আমি আঙ্কলকে বললাম, “গান শোনাবেন বলছিলেন?

তিনি একটি হারমোনিয়াম নিয়ে বসলেন অপূর্ব দরাজ গলায় গাইলেন,

“ভালোবাসি ভালোবাসি

এই সুরে কাছে দূরে     জলে স্থলে বাজাই বাঁশি 

আকাশে কার বুকের মাঝে     ব্যথা বাজে,

দিগন্তে কার কালো আঁখি      আঁখির জলে যায় ভাসি

স্যাম-আঙ্কল বিয়ে করেননি কেন? এত সুন্দর বাঙলা ভাষা, রবীন্দ্রসঙ্গীত, এসব শিখলেন কেমন করে? অনেক প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছিল মাথার মধ্যে ইতস্তত করে জিজ্ঞেস করেই ফেললাম একসময় ড্রয়িংরুমের গ্র‍্যান্ডফাদার ক্লক এগারোটার ঘণ্টা দিল দেশি মহুয়ার মৌতাতে ঈষৎ স্খলিত কণ্ঠে বাষট্টি বছরের বৃদ্ধ স্যামুয়েল বেস্ট সেদিন শুনিয়েছিলেন নিজের জীবন কাহিনি।

 

১৯৪৭ সালের পনেরোই আগস্ট কলকাতার রবিনসন স্ট্রিটের পৈতৃক বাড়িতে জন্ম হয় স্যামুয়েলের ঠিকই শুনেছেন ভারতবর্ষের স্বাধীনতা লাভের দিনেই তাঁর জন্ম আমি যখন বললাম, “সে কী! আজ আপনার জন্মদিন? আগে বলেননি কেন? আরও ভালোভাবে সেলিব্রেট করা যেত আজকের রাতটা!”

উনি মৃদু হেসে বলেছিলেন, “আগে পুরোটা শোনো, মাই বয়!”

অতঃপর আমি আর বাধা দিইনি তাঁকে

স্যামুয়েল যখন বাইশ বছরের যুবা, তখন তাঁর সঙ্গে আলাপ হল উনিশ বছরের মিস ভারতী ওব্রায়েনের ভারতী থাকতেন পার্ক স্ট্রিটের অ্যাংলো পাড়ায় প্রথম দর্শনেই প্রেমে পড়েন স্যামুয়েল এবং ভারতী ভারতীর মা শ্যামলীদেবী ভালোবেসে পরিবারের অমতে বিয়ে করেছিলেন পিটার ওব্রায়েনকে কিন্তু এই পিটার প্রতারণা করেন শ্যামলীর সঙ্গে গর্ভবতী স্ত্রীকে অসহায় অবস্থায় ফেলে রেখে অন্য একটি মেমসাহেবকে বিয়ে করে পিটার পালিয়ে যান ইংলন্ডে সম্ভবত এই কারণেই অ্যাংলো সাহেবদের উপর তীব্র ঘৃণা জন্মে ছিল শ্যামলীদেবীর মনে তিনি মেয়েকে পরিষ্কার জানালেন, এই সম্পর্ক তিনি মেনে নেবেন না কিন্তু উদ্দাম প্রেম কবে আর অভিভাবকের শাসন মেনেছে? লুকিয়ে-চুরিয়ে দেখা হতে লাগল স্যামুয়েল-ভারতীর দু’জনে বোর্ন অ্যান্ড শেফার্ডের স্টুডিওতে একসঙ্গে ফটো তুলিয়ে এলেন তাঁদের মধ্যে নিয়মিত চিঠি আদান-প্রদান হতে লাগল কমন ফ্রেন্ড সুনীলের মাধ্যমে এমনিতে অর্থ-প্রতিপত্তি-সামাজিক সম্মানে স্যামুয়েলের সমকক্ষই ছিলেন না ভারতী স্যামুয়েলের পিতা ছিলেন কলকাতার একটি কলেজের অধ্যাপক, অতিশয় সজ্জন ব্যক্তি অন্যদিকে ভারতী একজন স্বামী পরিত্যক্তার মেয়ে শ্যামলীদেবীর একটি ছোট্ট ফুলের দোকান ছিল পার্ক স্ট্রিট ও রাসেল স্ট্রিটের সংযোগস্থলে নাম, ‘ভারতী পুষ্প-বীথিকা কোনওরকমে সংসার চলত মা-মেয়ের তবু শ্যামলীর ছিল অদম্য জেদ মেয়েকে পুরোদস্তুর বাঙালি সংস্কৃতিতে শিক্ষিত করে তুলেছিলেন তিনি

ভারতী এক সন্ধ্যার অভিসারে একটা গীতবিতান হাতে ধরিয়ে দিয়ে স্যামকে বলেছিলেন, “জানো, মা বলেছেন শুধুমাত্র ইংরেজি জানা কোনও ছেলের সঙ্গে আমার কিছুতেই বিয়ে দেবেন না যে ছেলে রবীন্দ্রনাথ-বিবেকানন্দ-সুভাষ না জানে, সে কীসের ভারতীয়?

শ্যামলীদেবী এখানেই থেমে রইলেন না তাঁর মেয়ের সঙ্গে অবৈধভাবে মেলামেশার অপরাধে একদিন ঘর বয়ে স্যামের বাবাকে অপমান করে এলেন!

সুনীল এসে জানাল, ভারতীকে তার মা ঘরে বন্ধ করে রেখেছেন!

সেটা ১৯৭২ সাল রিটায়ার করলেন স্যামের বাবা এমনিতেই কলকাতা তখন নকশাল আন্দোলনে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে ম্যাকলাস্কিগঞ্জে এক বিশাল প্রপার্টি জলের দরে পেয়ে স্যামুয়েলকে নিয়ে সপরিবারে এখানে চলে আসেন বাবা ম্যাকলাস্কিগঞ্জে এসে স্যাম বেশ কিছু চিঠি লিখেছিলেন ভারতীকে, সুনীলের ঠিকানায় চিঠিতে জানিয়েছিলেন, তিনি পালিয়ে যাননি ড্যাডির আদেশে ম্যাকলাস্কিগঞ্জে এসেছেন অতি সুন্দর স্থান এটি এখানে তিনি নিয়মিত বাংলা ভাষা ও রবীন্দ্রসঙ্গীতের চর্চা করছেন ভারতী যেন চিন্তা না করে শীঘ্রই কলকাতায় ফিরে তাকে সসম্মানে বিয়ে করে আনবেন স্যামুয়েল 

সেদিন ছিল আর একটা পনেরোই আগস্ট ম্যাকলাস্কিগঞ্জ পোস্ট অফিসের ডাকপিন রামস্বরূপ জানাল, চিঠিটা গতকাল বিকেলের ডাকে এসেছে। আজ পোস্ট অফিস ছুটি, তবু ‘ছোটা সাহাবের’ চিঠি বলে সে সঙ্গে করে নিয়ে এসেছে চিঠিটা।

চিঠি দেখেই আনন্দে মনটা নেচে উঠেছিল স্যামের জন্মদিনে প্রিয়তমার চিঠি! এর থেকে খুশির আর কী হতে পারে? কিন্তু খাম খুলেই বজ্রাহত হয়ে গেলেন স্যাম! ভারতী আত্মহত্যা করেছে! সুনীলের চিঠি সুনীল লিখেছে, টানা গৃহবন্দি অবস্থায় মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিল ভারতী তাই সে গলায় ফাঁস দিয়ে মুক্তির চরম পথ বেছে নিয়েছে

এই অবধি বলে চুপ করে গেলেন স্যাম-আঙ্কল চোখ থেকে টপ টপ করে ঝরে পড়ছে অশ্রু কতদিনের কান্না জমানো ছিল, কে জানে! কীভাবে তাঁকে সান্ত্বনা দেব বুঝতে না পেরে গীতবিতানটার পাতা ওল্টালাম স্যামকে ভারতীর দেওয়া একমাত্র উপহার মলাট উল্টেই প্রথম পৃষ্ঠায় ‘শেষের কবিতা’র অন্তিম কবিতার দু’টি লাইন নিজের হাতে লিখে দিয়েছেন ভারতী বইয়ের ফাঁকে একটা পোস্ট-কার্ড সাইজের বিবর্ণ হয়ে যাওয়া সাদা-কালো ফটোগ্রাফ সুঠাম যুবাপুরুষ স্যামুয়েলের কাঁধে মাথা রেখে দাঁড়িয়ে শাড়ি পরিহিতা সুন্দরী তরুণী, ভারতী বইটা বন্ধ করলাম

আঙ্কল তখনও কাঁদছেন বললেন, “তারপর থেকে দীর্ঘ সাঁইত্রিশ বছর হয়ে গেল... আমি আর কলকাতায় ফিরে যাইনি বাবা-মা গত হয়েছেন বহুদিন আর আমার কেউ নেই নিজে ফোন ব্যবহার করি না এখানে পাহাড়, জঙ্গল, পরিত্যক্ত সাহেবিয়ানা আর গরিব আদিবাসীদের নিয়ে দিব্যি আছি শুধু মাঝে মাঝে একটাই দুঃখ হয়, মাই সন! রাস্কিন বন্ড থেকে রজার বিনি, জিম করবেট থেকে জর্জ অরওয়েল, লেসলি ক্লডিয়াস থেকে লারা দত্ত এঁরা সকলে অ্যাংলো-ইন্ডিয়ান হয়েও ‘ইন্ডিয়ান’; শুধু আমি একাই, স্বাধীনতার দিন জন্ম নিলেও ভারতীকে বিয়ে করে ‘ভারতীয়’ হতে পারলাম না! কিন্তু ভারতী এভাবে চলে গেল কেন? বেঁচে থাকতে কি পারত না, অন্য কাউকে বিয়ে করে?

কথায় কথায় রাত হয়ে যায় রাত কেটে গিয়ে সূর্যোদয়ও হয় গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার মতে কখন যে রাত বারোটা পার হয়ে পনেরোই আগস্টের অভিশপ্ত দিনটা কেটে গিয়েছে, বুঝতেই পারিনি

পরের দিন দুপুরে ম্যাকলাস্কিগঞ্জ স্টেশন থেকে যখন হাওড়াগামী শক্তিপুঞ্জ এক্সপ্রেসে চাপলাম, স্যামুয়েল বেস্ট অঘোরে ঘুমোচ্ছেন আমরা আর জাগালাম না ওঁকে বিরজুরা আমাকে স্টেশনে পৌঁছে দিয়ে চান্দোয়া ফিরে গেল রাত জাগার ক্লান্তি, ট্রেনের দুলুনিতে বুজে আসছিল দুচোখ তবু ঘুমোতে পারছিলাম না খালি মনে হচ্ছিল, কেন আত্মহত্যা করলেন ভারতী? শেষের কবিতার ওই লাইনগুলো কি তবে মিথ্যে? 

 



দুই

 

ম্যাকলাস্কিগঞ্জ থেকে বাড়ির পথে আমি সেবার শক্তিপুঞ্জ এক্সপ্রেস থেকে বর্ধমান স্টেশনে নেমে গিয়েছিলাম দশ দিন পরে যখন জব্বলপুরে ফিরব, হাওড়া স্টেশনে রাত দশটায় ছিল আমার ট্রেন এবার রিজার্ভেশন ছিল মেল ট্রেনের, মুম্বাই মেল ভায়া এলাহাবাদ এই ট্রেনটা ম্যাকলাস্কিগঞ্জের উপর দিয়ে যায় না

স্যামুয়েল বেস্ট ও ভারতী ওব্রায়েনের কাহিনি তখনও আমায় তাড়া করে বেড়াচ্ছে তাই ফেরার দিনে লোকাল ট্রেনে গ্রামের বাড়ি থেকে হাওড়া পৌঁছোলাম দুপুরবেলা হাতে অনেক সময় একটা ট্যাক্সি নিয়ে চললাম রাসেল স্ট্রিট ও পার্ক স্ট্রিটের সংযোগস্থলে সেই ফুলের দোকানটার খোঁজে কিন্তু অনেক খুঁজেও সেই দোকানের হদিস পাওয়া গেল না দীর্ঘ সাঁইত্রিশ বছরের ব্যবধানে এই অঞ্চলের আমূল পরিবর্তন ঘটে গিয়েছে শপিং-মল, বার, রেস্তোরাঁ, ঝাঁ চকচকে মোবাইল স্টোরের ভিড়ে সেই ছোট্ট ‘ভারতী পুষ্প-বীথিকা’র অস্তিত্ব বজায় থাকলেই বরং অবাক হতাম

তবুও, ‘বৃথা আশা মরিতে মরিতেও মরে না’ ভারতী ওব্রায়েন সম্পর্কে জানার জন্য ওই দোকানটুকুই ছিল একমাত্র সূত্র আমার কাছে জব্বলপুরের হস্টেলে ফিরে বিরজুকে জানিয়েছিলাম কথাটা সেই সঙ্গে বলেছিলাম, “স্যাম-আঙ্কলের সঙ্গে দেখা হলে যেন বলিস না যে, ভারতীর নামে দোকানটাও উঠে গিয়েছে মানুষটা আরও কষ্ট পাবেন।”

আমার কাহিনি এখানেই শেষ হয়ে যাবার কথা কিন্তু শেষ হতে দিল না, আমার অ্যালার্জি!

 

২০১০ সালের সেপ্টেম্বরে জব্বলপুর থেকে পাকাপাকিভাবে কলকাতায় ফিরে আসি পোস্ট গ্র‍্যাজুয়েশন কমপ্লিট করে যাদবপুরের একটি গবেষণাগারে ডক্টরেট প্রোগ্রামে ঢুকলাম, সেই সঙ্গে আমার স্কুলবেলার বান্ধবীটিও কলকাতায় এসে জুটলেন পথ যখন আবার দুজনকে ‘বন্ধনহীন গ্রন্থি’তে বেঁধেই দিলেন; আমরাও দু’জনে উড়ে বেড়াতে লাগলাম, ‘চলতি হাওয়ার পন্থী’ হয়ে! বান্ধবীর ভীষণ আগ্রহ ছিল পুরোনো কলকাতা, বইপাড়া, প্রাচীন রাস্তাঘাট, মিউজিয়াম এই সব সম্পর্কে পার্ক, শপিং-মল, রেস্তোরাঁ বা মাল্টিপ্লেক্স তাঁর খুব একটা ভালো লাগত না স্যাম-আঙ্কল ও ভারতীর কাহিনি আমরা দু’জনে ইতিমধ্যে অনেকবার আলোচনা করেছি 

এর মধ্যে একবার আমার হাতের উপর ল্যাবের কেমিক্যাল লেগে গিয়ে অ্যালার্জি বের হয়ে গেল ডাক্তারবাবুর পরামর্শে একদিন সকালে খালি পেটে ‘রয় অ্যান্ড ত্রিবেদী’ ডায়াগনোস্টিক সেন্টারে অ্যালার্জি টেস্ট করাতে গেলাম যথারীতি বান্ধবী আমার সঙ্গী হলেন

‘রয় অ্যান্ড ত্রিবেদী’তে রক্তদান করে আমরা দুজন ঝালমুড়ি খেতে খেতে পায়ে হেঁটে পার্ক স্ট্রিট ধরে ফিরছিলাম মল্লিকবাজারের দিকে রাস্তার ডানদিকে লম্বা দেওয়াল ভিতরে গাছ-গাছালিতে পরিপূর্ণ

বান্ধবীকে বলছিলাম, “এটাই হল সাউথ পার্ক স্ট্রিট সিমেটারি, এশিয়ার সবচেয়ে প্রাচীন এবং ‘হাই-প্রোফাইল’ ক্রিশ্চিয়ান গোরস্থান এখানেই মাটির নীচে শায়িত আছেন স্যার উইলিয়াম জোন্স, রবার্ট কিড, হেনরি লুই ডিরোজিওর মতো অসংখ্য ব্যক্তিত্ব! সত্যজিতের ‘গোরস্থানে সাবধান’ আসলে এই

কথা বলতে বলতেই আমার দৃষ্টি গেল একটা ঠেলা গাড়ির দিকে

বান্ধবী এক মনে আমার কথা শুনছিলেন তিনি, “কী হল, চুপ করে গেলে যে?” বলতে আমি তাঁর দৃষ্টি আকর্ষণ করলাম ঠেলা গাড়িটার দিকে

গোরস্থানের বাইরের দেওয়াল ঘেঁষে একটি যুবতী নানারকম ফুল ও মালা বিক্রি করছে ওই ঠেলা গাড়িতে গাড়িটির গায়ে একটা সাইনবোর্ড তাতে লেখা:ভারতী পুস্প-বীথিকা’!

বান্ধবী রীতিমতো উত্তেজিত হয়ে আমার অপেক্ষায় না থেকেই রাস্তার ওপারে চলে গেলেন ঠেলা গাড়ির মালকিন ফর্সা, সুন্দরী, কিন্তু মুখটি যেন বিষাদগ্রস্ত আমি ভাবছিলাম, শুধুমাত্র নামের মিল দেখে মেয়েটিকে কিছু জিজ্ঞেস করা উচিত হবে কি না, তার আগেই একটি গোলাপ কিনে বান্ধবী মেয়েটিকে জিজ্ঞেস করলেন, “আচ্ছা, এই ভারতী, মানে যাঁর নামে দোকান, তিনি কি আপনার আত্মীয়?

মেয়েটি বলল, “হ্যাঁ উনি আমার মা।”

তাহলে এ নয় ভাবলাম আমি ভারতী তো বিয়ের আগেই আত্মহত্যা করেছিলেন! তাঁর মেয়ে কী করে হবে!

বান্ধবী তবু দমলেন না বললেন, “আপনার নামটা জানতে পারি?

“কনক কনকলতা পল।” উত্তর দিল মেয়েটি 

“ও! আপনি তাহলে ভারতী ওব্রায়েনের কেউ হন না আপনার মা হলেন মিসেস ভারতী পল, তাই তো? আমরা আসলে ভারতী ওব্রায়েনের আত্মীয়দের খুঁজছি প্লিজ কিছু মনে করবেন না।” এই বলে চলে এলেন বান্ধবী

মেয়েটি একদৃষ্টে তাকিয়ে রইল আমাদের দিকে

আমরা হাঁটতে হাঁটতে প্রায় মল্লিকবাজার ক্রসিং-এ চলে এসেছি, এমন সময় পিছন থেকে ডাকল কনক, “একটু এদিকে শুনবেন?

কী ব্যাপার?” আমি এগিয়ে গেলাম

কনক বলল, “আপনারা কেন ভারতী ওব্রায়েনকে খুঁজছেন, জানতে পারি? হয়তো আমি কিছু সাহায্য করতেও পারি আমাকে দয়া করে বলবেন?

আমি সংক্ষেপে বললাম ম্যাকলাস্কিগঞ্জের স্যাম-আঙ্কলের কথা জানালাম, বছর দেড়েক আগে দেখা হয়েছিল তাঁর সঙ্গে

কনক সবটা মন দিয়ে শুনল। কী যেন চিন্তা করল কয়েক মুহূর্ত। তারপর বলল, “আপনারা আসুন আমার সঙ্গে।” বলেই সে হাঁটতে লাগল

আমরা দুজন মুখ চাওয়াচাওয়ি করে পিছু নিলাম কনকের দেখাই যাক না

গোরস্থান থেকে মল্লিকবাজারের দিকে কিছুটা এগিয়ে গিয়ে গলি, তস্য গলির ভিতর দিয়ে একটা বহু পুরোনো, জরাজীর্ণ, ঘিঞ্জি পাড়ায় এক বাড়ির দোতলায় হাজির হলাম আমরা আসবার পথে মনে হল, এই পাড়ায় এখনও কিছু গরিব অ্যাংলো ইন্ডিয়ানদের বসবাস রয়েছে রাস্তায় কনক একটাও কথা বলেনি সে সিঁড়ির মুখে দাঁড়িয়ে দরজার তালা খুলতে লাগল দরজার পাশে শ্বেতপাথরের একটি নেমপ্লেট, তাতে লেখা: ‘সুনীল কে. পল!’

এক মুহূর্তে সব কিছু গোলমাল হয়ে গেল আমার সুনীল, স্যাম-আঙ্কল ও ভারতীর কমন ফ্রেন্ড ছিলেন, না! ইনি কি সেই সুনীল?

কনক ততক্ষণে দরজা খুলেছে স্মিত হেসে এবার সে বলল, “আপনারা বাইরে দাঁড়িয়ে কেন? ভিতরে আসুন মা, দেখো কারা এসেছেন?

আমরা দুজন কিছুটা হতবুদ্ধি হয়ে ভিতরে ঢুকলাম বিছানায় শায়িতা একজন শীর্ণ, বিগত-যৌবনা, ক্ষয়িষ্ণু বৃদ্ধা! যেন কোনওরকমে প্রাণবায়ুটি অন্তরে ধরে রেখেছেন

আমার বান্ধবী ফিসফিস করে বললেন, “ইনিই ভারতী ওব্রায়েন দেখে নিয়ো সুনীল আসলে ভারতীকে বিয়ে করবে বলে স্যাম-আঙ্কলকে ভুয়ো চিঠি দিয়েছিল আমি শিওর!”

আমার মনেও ততক্ষণে এই সম্ভাবনার কথা এসেছে। কিন্তু বৃদ্ধার চেহারা দেখে ইনিই ভারতী বলে বিশ্বাস করতে ইচ্ছে করছিল না আর একটু নিশ্চিত হওয়া দরকার আমি বললাম, “আপনার বাবাকে দেখছি না?

কনক বলল, “আমার ড্যাডি মারা গিয়েছেন পাঁচ বছর হল মৃত্যুশয্যায় তিনি নিজের মুখে সব কথা মায়ের কাছে স্বীকার করে যান ইয়েস, ড্যাডি হ্যাড স্টোলেন মমস লাভ, অ্যাজ হি অলসো লাভ্‌ড মাই মম ব্যাডলি! বাট হি লেটার রিয়েলাইজড, দিস ওয়াজ অ্যা ক্রাইম! ড্যাডি আমার উপর দায়িত্ব দিয়ে গিয়েছিলেন, তাঁর মৃত্যুর পরে মাকে নিয়ে আমি অন্তত একবার যেন ম্যাকলাস্কিগঞ্জে যাই কিন্তু মা কিছুতেই যেতে রাজি হলেন না মা পক্ষাঘাতগ্রস্ত তাছাড়া স্যাম-আঙ্কল এতদিনে কেমন আছেন, তাঁর স্ত্রী, সন্তানাদি সম্পর্কে কিছুই আমরা জানতাম না।”

আমরা দুজনে বৃদ্ধার পায়ের কাছে বসলাম আমি তাঁর দিকে তাকিয়ে শুধু বললাম, “স্যাম-আঙ্কল আপনার উপহার দেওয়া গীতবিতানটি আজও রেখে দিয়েছেন যত্ন করে আর বইয়ের ভাঁজে বোর্ন অ্যান্ড শেফার্ডে তোলা আপনাদের সেই ছবিটা...”

বৃদ্ধার শুকিয়ে যাওয়া চোখের কোণটা চিকচিক করে উঠল অস্ফুট স্বরে কিছু বলতে চাইলেন মনে হল একবার মেয়ের দিকে চাইলেন কনক একটা ফটোগ্রাফ নিয়ে এল আলমারি খুলে ম্যাকলাস্কিগঞ্জের সেই পোস্টকার্ড সাইজ সাদা কালো ছবিটার জমজ প্রিন্ট!

আমরা আর বসলাম না ভারতীদেবীকে প্রণাম জানিয়ে সিঁড়ি দিয়ে নেমে এলাম। চোখ ঝাপসা হয়ে যাচ্ছিল এমনি এমনিই। এতদিনে বুঝলাম, মিথ্যে হয়ে যায়নি শেষের কবিতার সেই অমোঘ লাইন দুটো:

...উৎকণ্ঠ আমার লাগি কেহ যদি প্রতীক্ষিয়া থাকে

সেই ধন্য করিবে আমাকে।”

আমরা প্রায় দৌড়ে বাসস্টপের দিকে এগিয়ে গেলাম সম্প্রতি মোবাইল হ্যান্ডসেটটা চেঞ্জ করেছি বিরজুর নম্বরটা ফোনে সেভ করা নেই কিন্তু ডায়রিতে লেখা আছে এখনই বাসায় ফিরে দেখতে হবে।

 

(সমাপ্ত)

 অলঙ্করণ: প্রদীপ গোস্বামী

______________________________________________________________________________

পড়ুন সুশোভন চৌধুরীর কলমে সুদীর্ঘ রোমাঞ্চকর প্রবন্ধ জঙ্গলরাজ’, শুধুমাত্র  অন্তরীপ জল-জঙ্গল-বন্যপ্রাণ সংখ্যায়




 

 

 


মন্তব্যসমূহ