হয়তো এভাবেও ফিরে আসা যায়! - দিব্যেন্দু

 


হয়তো এভাবেও ফিরে 

আসা যায়!


দিব্যেন্দু


 

হঠাৎই তিনি বলে উঠলেন, “আমি তিনদিনের মধ্যে মারা যাব।”

কেউ হঠাৎ এরকম কেন বলবেন? গল্পটা পিছিয়ে গিয়ে শুরু করা যাক। সময়টা সত্তরের শেষ। উত্তরপ্রদেশের ইটাওয়া জেলার এক গ্ৰামের ঠাকুর পরিবারে জন্ম হয় সুমিত্রা দেবীর। কম বয়সে মাকে হারান। বাবাও রোজগারের জন্য বাইরে বাইরে ঘোরেন। তাই তাঁর বেড়ে ওঠা পাশের জেলায় কাকার মেয়ে মালার কাছে। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার সুযোগ মেলেনি কিন্তু মালার থেকে অল্প লিখতে-পড়তে শিখেছিলেন।

কম বয়সেই জগদীশ সিংয়ের সঙ্গে বিয়ে হয়ে যায়। কিন্তু স্বামী কাজের সূত্রে বেশিরভাগ সময় বাইরে থাকতেন। বিয়ের বছর তিন পর সুমিত্রার কোলে আসে এক সন্তান। একাকীত্বের জীবনে নতুন আশার আলো নিয়ে এল সেই সন্তান। তাকে যাতে কাছছাড়া না করতে হয় তাই বুকে বেঁধে রেখেই নানা কাজকর্ম সারতেন।

কিন্তু কথায় আছে— সবদিন কারও সমান যায় না, সুমিত্রার সুখের দিনগুলোও স্থায়ী হল না। বাচ্চাকে বুকে বেঁধে গ্ৰাম থেকে দূরে কুয়োর জল নিয়ে ফিরে আসার সময় হঠাৎ থমকে গেলেন সুমিত্রা দেবী। বালতি হাত থেকে পড়ে গেল। শব্দ শুনে আশেপাশের মহিলারা দৌড়ে গিয়ে দেখলেন সুমিত্রা দেবী পাথরের মতো দাঁড়িয়ে। হাতের আঙুলগুলো খুব দ্রুত পিছনের দিকে বেঁকে যাচ্ছিল। জোরে জোরে দাঁতে দাঁতে ঘষার আওয়াজ হচ্ছে।

“কী হল রে তোর?” প্রশ্নের জবাব মিলল না। সুমিত্রা দেবীর চোখ কপালে উঠে যাচ্ছে। হঠাৎই বাচ্চাটা কেঁদে উঠল। বাচ্চার কান্না আর সুমিত্রা দেবীর আচরণ দুইয়ের মিশেলে আশেপাশে লোকজনের ভিড় জমে উঠছে ধীরে ধীরে। যদিও তারা কী করবে ভেবে ওঠার আগেই সুমিত্রা দেবীর হুঁশ ফিরল। বাচ্চার কান্না আর লোকজনের ভিড় দেখে বেশ লজ্জিত ও বিব্রত হন সুমিত্রা। তড়িঘড়ি জলের বালতি তুলে নিয়ে বাড়ির পথে পা বাড়ালেন সে-দিন।

ওই সময়টুকু কী ঘটেছিল তা মনে করতে পারেননি, কেউ কিছু বলেওনি। হয়তো প্রসব-পরবর্তী মানসিক চাপ অথবা রাত জেগে বাচ্চা সামলানো— এসব সাতপাঁচ ভেবে তিনিও চুপ থাকেন।

কিন্তু না, সমস্যা আবার ফিরল কয়েক সপ্তাহ পরেই। সুমিত্রা দেবীর শ্বশুর একদিন রান্নাঘরে গিয়ে দেখেন যে, শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছেন সুমিত্রা দেবী। হাত সেই পিছনের দিকে বেঁকে গেছে, চোখ প্রায় কপালে। শ্বশুর পরে তাকে বলেছিলেন প্রায় মিনিট দশেক নানান চেষ্টাতেও স্বাভাবিক করা যায়নি, যদিও সে-সব ঘটনার কিছুই মনে করতে পারেননি সুমিত্রা দেবী।

কিছু দিন পেরোনোর পর এই হঠাৎ বদলে যাওয়ার ঘটনা প্রায় প্রতিনিয়তই ঘটছিল। অদ্ভুত সব কথা বেরোত মুখ দিয়ে। কখনও সাহায্যের জন্য চিৎকার করে উঠতেন, অথবা বলে উঠতেন কেউ যেন তার মাথা থেঁতো করে দিচ্ছে। হঠাৎ করেই চিৎকার বদলে যেত ফিসফিস স্বরে— “থাকে শুধু অন্ধকার!”

স্থানীয় চিকিৎসককে ডেকেও লাভ হয়নি, বুঝতে পারছিলেন না সমস্যা কোথায়। আসলে ওই সময়টুকু ছাড়া বাকি সময় তো সুমিত্রা দেবী স্বাভাবিক জীবনযাপন করতেন। কয়েক মাস পর তারিখটা ছিল ১৬ জুলাই। সে-দিন রান্না করতে করতে হঠাৎই শান্ত স্বরে তিনি বলে উঠলেন, “আমি তিনদিনের মধ্যে মারা যাব।”

এরপর অদ্ভুত পরিবর্তন আসে সুমিত্রা দেবীর জীবনে। প্রিয় সন্তানকে নিজের থেকে দূরে সরিয়ে রাখেন যাতে তার থেকে সন্তানের কোনও ক্ষতি না হয়। এতকিছুর জন্য স্বামীও বাড়ি ফিরে আসতে বাধ্য হয়েছিলেন। দুটো দিন কেটে যাওয়ার পর তিন দিনের দিন সকাল থেকে চুপচাপ বসেছিলেন। সম্ভাব্য ক্ষতি থেকে দূরে থাকার জন্য আগুনের কাছে রান্না করতে যাননি। ভয়ে সিঁড়ি দিয়েও নামেননি, পাছে গড়িয়ে পড়ে যান। এ দিকে দুপুর গড়িয়ে বিকেল। সূর্য দিগন্তে হারিয়ে যাওয়ার পথে। তখনও পর্যন্ত কিছু ঘটেনি দেখে সবাই খানিক বিশ্রাম নিচ্ছিল। রাতের রান্নার প্রস্তুতি শুরু করছিলেন শাশুড়ি। সারাদিন ঘরে কাটানোর পর সুমিত্রা দেবীও বাড়ির বাইরে সামনের রাস্তায় হাওয়া খেতে বেরোলেন। পরিচিত বান্ধবীকে দেখে হাত নেড়ে ডেকেওছিলেন, কিন্তু সেই বান্ধবী কাছে আসতে না আসতেই...

সুমিত্রা দেবীর মধ্যে পরিবর্তন দেখা গেল। বান্ধবীটির কাছে এই ঘটনা গ্ৰামের অন‍্য সবার মতোই নতুন কিছু না। কিন্তু এবার যেন অন‍্য সব-বারের মতো না। ছুটে গিয়ে দেখল অদ্ভুত সব আওয়াজ মুখ দিয়ে বেরিয়ে আসছিল। হাওয়ায় হাত বুলিয়ে কিছু-একটা ধরার চেষ্টায় ছিলেন সুমিত্রা দেবী। ধীরে ধীরে আওয়াজ ক্ষীণ হতে হতে একসময় স্তব্ধ হয়ে গেল। বান্ধবী বুঝতে পারে সুমিত্রা দেবী দাঁড়িয়ে থাকলেও তার শ্বাস নেওয়া বন্ধ হয়ে গেছে। গ্ৰামের মন্দিরের মূর্তিটার মতো নিথর হয়ে পড়েছেন সুমিত্রা দেবী।

বান্ধবী দ্রুত বাড়ির লোকজনকে ডেকে নিয়ে আসে। সেই গ্ৰামীণ চিকিৎসক এসে হাতের নাড়ি পরীক্ষা করে জানান সব শেষ! কান্নার রোল উঠলেও সুমিত্রা দেবীর নিথর শরীর তখনও সটান দাঁড়িয়ে। সেই চিকিৎসক এবং শ্বশুরমশায় মিলে দাঁড়িয়ে থাকা দেহটিকে শুইয়ে দেন। অনেকেই জানত আজ সুমিত্রা মারা যাবেন। কেউ কেউ দ্রুত অন্ত‍্যেষ্টিক্রিয়ার প্রক্রিয়া শুরু করার কথা বললেন। এমনিতেই গ্ৰামের আশেপাশে হাসপাতাল না থাকায় মৃত্যু পরবর্তী প্রক্রিয়ার বালাই ছিল না।

হিন্দুদের শাস্ত্রমতে সধবা মহিলার মৃতদেহ পুড়িয়ে ফেলার আগে কিছু আচার রয়েছে। কিছু মহিলা মিলে সেগুলো শুরু করে দিয়েছিল। বাকিরা চিতা তৈরির কাঠ জোগাড়ে ব‍্যস্ত হয়ে পড়ে। সুমিত্রা দেবীর নিজের মৃত্যু সম্পর্কে করা ভবিষ্যদ্‌বাণী গ্ৰামের অনেকেই জানতেন। যখন সেই ভবিষ্যদ্‌বাণী সঠিক হয়ে গেল, অনেকেই বিশ্বাস করতে শুরু করলেন এই গ্ৰামের ওপর অন্ধকার শক্তির কালো ছায়া পড়েছে। মুশকিল হল ছোটো ছোটো বাচ্চাদের। মায়েরা ভয়ে তাদের বাইরে বেরোতে দেননি। এতকিছু শুনছে, অথচ দেখতে পাচ্ছে না। বাবা-মায়েরা নিচু স্বরে কত আলোচনা করছে। জানালার শিক ধরে তাই তারা উশখুশ করছিল।

এদিকে শুইয়ে রাখা সুমিত্রা দেবীর মুখে তেল মাখানোর পর যখন এক মহিলা সবে চুলগুলো আঁচড়ে দিতে শুরু করেছেন, আঁ-আঁ করে চিৎকার করে ছিটকে পড়লেন। আশেপাশের জড়ো হওয়া মহিলাদের ভিড় ভয়ে ক্রমশ দূরে সরতে সরতে দেখতে পেল সুমিত্রার চোখ দুটো বন্ধ অবস্থায় এদিক-ওদিকে করছে। চোখের পাতায় অদ্ভুত স্পন্দন দেখা গেল। বুক ভরে শ্বাস নেওয়ার পর চোখ দুটো খুলে গেল। সবাইকে অবাক করে উঠে বসে চারদিকে তাকিয়ে দেখছিলেন সুমিত্রা দেবী।

প্রথমেই মুখ থেকে তেল মুছে ফেললেন। সবাই বলাবলি করছিল এতক্ষণ ধরে হৃৎস্পন্দন বন্ধ থাকার পর এও সম্ভব? সেই গ্ৰামীণ চিকিৎসক ছুটে এসে তার নাড়ি আর হৃৎস্পন্দন পরীক্ষা করতে থাকেন। সবকিছু দেখে সুমিত্রা দেবীর কেমন লাগছে জিজ্ঞেস করেন। তিনি ঠিক আছেন জানাতেই চিকিৎসক হাসিমুখে জমতে থাকা ভিড়ের দিকে ঘুরে তাকিয়ে ঘোষণা করেন, “আপনারা অলৌকিক ঘটনার সাক্ষী হলেন। মৃত্যুর পর আবার ফিরে এসেছেন সুমিত্রা দেবী।”

ঘটনার পারিপার্শ্বিকতায় হতবাক ছিল সুমিত্রা দেবীর পরিবার। প্রাথমিক বিহ্বলতা কাটিয়ে তার স্বামী আনন্দে তাকে জড়িয়ে ধরতে গেলে সুমিত্রা দেবী নিজেকে সরিয়ে নেন। খানিকটা অবাক হয়ে পড়ছিলেন জগদীশ। সেই গ্ৰামীণ চিকিৎসক তখন তাঁর কাঁধে হাতে রেখে বোঝালেন, “বুঝতেই তো পারছেন সুমিত্রা দেবীর ওপর দিয়ে একটা ঝড় বয়ে গিয়েছে। কিছু সময় দিন। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে উনি স্বাভাবিক হয়ে উঠবেন।”

স্বামী-সহ শ্বশুর বাড়ির সবাই সেটাই ভেবেছিল। এমনকি গ্ৰামের লোকজনও তা-ই বুঝেছিল। কিন্তু পরদিন ঘুম থেকে উঠে শ্বশুরবাড়ির লোকজনকে দেখে সুমিত্রা দেবী সেখান থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। স্বামী দৌড়ে গিয়ে তাকে ধরে ফেলার পর বলতে থাকেন এটা তার বাড়ি নয়। এ অন‍্য পরিবার। উপস্থিত সবাই অবাক হয়ে পড়ে।

ঘটনার মাস তিনেক কেটে যাওয়ার পর রাম ত্রিপাঠী নামের একজন সুমিত্রা দেবীর বাড়িতে আসেন। এসেই জগদীশকে বলেন, “এখানে এক মহিলা অস্বাভাবিক নানারকম আচরণ করছেন?” জগদীশ অবাক হন যে এই অপরিচিত ব‍্যক্তি সুমিত্রার এখনকার নানান আচরণ কীভাবে জানলেন? সুমিত্রা দেবীকে গিয়ে ওই ব‍্যক্তির কথা বলতেই তিনি তখনই ছুটে গিয়ে রাম নামের অপরিচিত ব‍্যক্তিকে বলে ওঠেন, “বাবা আমি তোমার শিবা, ওরা আমাকে মেরে ফেলেছে।”

এই পর্যন্ত পড়ে আপনারা নিশ্চয়ই অবাক হচ্ছেন? সুমিত্রা দেবী তা হলে শেষ পর্যন্ত মানসিক ভারসাম্য হারালেন? সে কথায় না-হয় পরে আসা যাবে। আপাতত জেনে নেওয়া যাক কে এই শিবা? হঠাৎ সুমিত্রা দেবীর বাড়িতে আসা রাম ত্রিপাঠী-ই বা কে?

শিবা ত্রিপাঠী জন্মেছিলেন ১৯৬২ সালে। তার বাবা রাম ত্রিপাঠী কলেজে অধ‍্যাপনা করতেন। এটাওয়া-তে বড়ো হয়ে ওঠা শিবা হোম ইকনমিক্স নিয়ে পড়াশোনা করে‌ শেষ করে। বছর আঠারো বয়সে ছেদি লালের সঙ্গে তার দেখাশোনা করে বিয়ে হয়। বিয়ের পর সে দিব‍্যাপুরেই থাকতে শুরু করে। সময়ের সঙ্গে রিঙ্কু আর টিঙ্কু নামের দুই সন্তানের জন্ম দেয়। যদিও শ্বশুরবাড়িতে শিবার সঙ্গে সবার কিছু না কিছু নিয়ে খিটিমিটি লেগেই থাকত। কেউ কেউ বলেন সে উচ্চশিক্ষিত আর তার শহুরে আচরণ নিয়ে সমস্যা, আবার কারও মতে দাবিমতো ঠিকঠাক পণ পায়নি বলে শ্বশুর বাড়ির লোকজন অসন্তুষ্ট ছিল। পরীক্ষা দেওয়া অথবা কোনও অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়া— এরকমই কিছু একটা নিয়ে একদিন ঝামেলা চরমে ওঠে। ১৯৮৫ সালের ১৮ মে বিকেলে শিবার মামা তার সঙ্গে দেখা ক‍রতে গেলে শিবা কাঁদতে কাঁদতে জানায় যে, শাশুড়ি ও এক ননদ মিলে তাকে মেরেছে। তিনি সব শুনে তাকে বোঝানোর চেষ্টা করলেও সে-চেষ্টা বিফলে যায়। পরদিন সকালে তিনি জানতে পারেন শিবার মৃতদেহ রেললাইনের ধারে পাওয়া গেছে। শ্বশুরবাড়ির লোকজন জানায়, সে রেললাইনে ঝাঁপ দিয়েছে। বাবা রাম ত্রিপাঠীকে নিয়ে আসার আগে যেন দেহ দাহ না করা হয় বললেও সেই মামা ফিরে এসে দেখেন, তারা দেহ পুড়িয়ে ফেলেছে। থানায় অভিযোগ দায়ের করলে শ্বশুরবাড়ির লোকজনকে ধরে নিয়ে যায়। কিন্তু প্রমাণের অভাবে একে একে সবাই ছাড়া পেয়ে যায়।

সুমিত্রা দেবীর সঙ্গে কথা বলে রাম ত্রিপাঠীও মেনে নিয়েছিলেন এই তার মেয়ে শিবা। আবার সে ফিরে এসেছে মৃত্যুর পর। সুমিত্রা তার ধর্মমেয়ে। এই স্বীকৃতি দিয়ে এটাওয়া নিয়ে গিয়ে জগদীশকে চাকরিও জোগাড় করে দেন। নানান সমস্যার কারণে তারা সেখান থেকে ফিরে এসে শরিফপুরে বাস করতে শুরু করেন। ত্রিপাঠীরাও ক্রমশ দুরত্ব বাড়িয়ে নেন। এমনকি সুমিত্রা দেবীর মৃত্যুর খবরটাও রাখেননি।

এতকিছু বলার পর শ্রীজাতর দুটো লাইন খুব প্রাসঙ্গিক মনে হয় :

‘তুমিও তো অন্য লোক, অন্য কোনও নামে

বেঁচে আছো জুড়ে থাকা ধড়ে ও মাথায়...’

ঘটনাটি আসলে কী? পুনর্জন্ম? আত্মার শরীর দখল? এই নিয়ে বিস্তর গবেষণা হয়‌। কেউ বিশ্বাস করেন, কেউ করেন না‌। কারও মতে এই ঘটনা পুনর্জন্মের জলজ্যান্ত প্রমাণ। কেউ বুজরুকি বলেন। আলোর উল্টো পিঠে যেমন অন্ধকার, সত‍্যেরও অধিক মিষ্টি প্রলেপে তেমনই মিথ্যে লুকিয়ে থাকে। উত্তরের মধ্যেই ঘাপটি মেরে বসে থাকে নিত্যনতুন প্রশ্ন। সবকিছু জেনে-বুঝেও তাই সেই অমোঘ কথাটাই যেন ফিরে আসেবিশ্বাসে মিলায় বস্তু, তর্কে বহুদূর



___________________________________


মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি